যে অতীত প্রেরণা যোগায়

পর্ব - ১

0 ৬০
মুমিনীন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকাল। মিসরের শাসনকর্তা হযরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু। খ্রিস্টান সাম্রাজ্য ইসলামকে বিনাশ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোমান বাহিনী শেষ পর্যন্ত আলেকজান্দ্রিয়া দখলেরও পাঁয়তারা করছে। কিন্তু সুশাসক আমর ইবনে আস নিষ্ঠার সঙ্গে শাসন করছেন। খ্রিস্টানদের শাসন করতেন নিজেদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই। খ্রিস্টানরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারছে।
একদিন সকাল বেলা। আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিস্টান পল্লীতে হইচই পড়ে গেল। বাজারে রাস্তার পাশে মানুষের জটলা হয়ে আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। খ্রিস্টানদের স্থানীয় পাদরি গেলেন আমর ইবনুল আসের বাসভবনে। বাজারের ঘটনার বিচার করতে হবে। তার সঙ্গে আরো অনেকেই গেলেন। পাদরি জানালেন, গত রাতে কেউ একজন বাজারের যিশু খ্রিস্টের মার্বেলের মূর্তির নাক ভেঙে ফেলেছে। এই মূর্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের জন্য। খ্রিস্টানরা ধরে নিয়েছে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।
আমর ইবনুল আস এ কথা শুনে খুবই কষ্ট পেলেন। তিনি বললেন, আমি খুবই লজ্জিত, ব্যথিত। সত্যি কথা, ইসলামে মূর্তিপূজা জায়েয নয়। কিন্তু অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দেওয়াও নিষেধ। দয়া করে আপনি মূর্তিটা মেরামত করে নিন। আমি সব খরচ দিয়ে দেব।
পাদরি বললেন, এই মূর্তি মেরামত করা যাবে না। আমর ইবনে আস বললেন, তাহলে নতুন করে বানিয়ে নিন। আমি খরচ দিচ্ছি।
পাদরি বললেন- না, সেটাও হবে না। আপনি জানেন, যিশু ঈশ্বরপুত্র। তাঁর মূর্তির এমন অবমাননা সহ্য করা যায় না। একটাই ক্ষতিপূরণ, আমরা আপনাদের মুহাম্মদের মূর্তি বানিয়ে সেটার নাক ভাঙব।
একথা শুনে রাগে জ্বলে উঠল আমর ইবনুল আসের সারা শরীর। তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রিস্টান পাদরিকে বললেন, আপনি যা বললেন সেটা সম্ভব নয়। আমাদের সম্পদ এবং পরিবারের চেয়েও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বেশি ভালোবাসি। আমার অনুরোধ, এই প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোনো প্রস্তাব করুন, আমি রাজি আছি। আমাদের যে কোনো একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।
খ্রিস্টান নেতা সবাই এই প্রস্তাবে রাজি হলো ।
পরদিন খ্রিস্টান ও মুসলমান সকলেই বিরাট এক ময়দানে সমবেত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর ইবনে আস সবার সামনে হাজির হয়ে পাদ্রীকে বললেন, এই দেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এই তলোয়ার নিন এবং আপনিই আমার নাক কেটে দিন।
একথা বলেই পাদরির হাতে একটি ধারালো তলোয়ার তুলে দিলেন। পাদ্রী সেটা পরীক্ষা করলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খ্রিস্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। হঠাৎ সেই নীরবতা ভেঙে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বলল, আমিই দোষী, সেনাপতির কোনো অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙেছি। এইতো আমার হাতেই আছে সে নাক। তবে মূর্তি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর ছুঁড়তে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে…
সৈন্যটি এগিয়ে এসে পাদ্রীর তলোয়ারের নিচে নাক পেতে দিল। পাদ্রী কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। নির্বাক সবাই। পাদ্রীর ভেতরটা নড়ে উঠল। তলোয়ার ছুঁড়ে ফেলে পাদ্রী বললেন, ধন্য সেনাপতি, ধন্য হে বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ- যার মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভীক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যিশু খ্রিস্টের প্রতিমূর্তির অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়েও অন্যায় হবে যদি একজন সুস্থ মানুষের অঙ্গ নষ্ট করি ।
[তথ্যসূত্র : ওয়াকিদি, ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫]

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//mordoops.com/4/4139233