যে অতীত প্রেরণা যোগায়

পর্ব- ২

0 ১০৭

আজ আপনাদের কে ঈমানের বলে বলীয়ান একজন মুসলিম বীরের ঈমান দীপ্ত দাস্তান শুনাবো।  যিনি স্বীয় ঈমান ও বিশ্বাসের উপর এমনভাবে অবিচল ছিলেন।যার ঈমানী অবিচলতা স্বয়ং উমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহু কে ও মুগ্ধ করেছিল। তিনি উম্মাহর এমন এক ব্যাক্তি যাকে স্বয়ং উমর ফারুক রাযিঃ এই উম্মাতের “ইবরাহীম খলীল” উপাধিতে ভূষিত করেছেন। তিনি হলেন ইয়ামানের অধিবাসী “আবু মুসলিম আল-খাওলানী (রহঃ)।

সবেমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই চারিদিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো ফেতনা। নবুয়তের মিথ্যা দাবীদাররা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরবর্তী নবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। আর নবুয়তের এই মিথ্যা দাবীদারদের সঙ্গী হল স্বগত্রীয় জ্ঞানহীন কিছু দুর্বল ঈমানের নওমুসলিম। আর এই মহা মিথ্যুকদের একজন ছিল ” আসওয়াদ আল-আনাসি”(লানাতুল্লাহি আলাইহি)। ইয়ামান এবং ইয়ামানের আশেপাশের এলাকায় এই “আসওয়াদ” ও তার অনুসারীরা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। এইসব এলাকায় যারা তাকে নবী হিসেবে মেনে না নিতো তাদের মাথার উপরে নেমে আসতো নাঙ্গা তরবারী।

আবু মুসলিম আল-খাওলানী কে (রহঃ) আটক করে নিয়ে আসা হল নরাধম “আসওয়াদ আনাসির” সামনে। সে আবু মুসলিম খাওলানী কে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই?
আবু মুসলিমঃ হ্যা,আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
আসওয়াদঃ তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল??
আবু মুসলিমঃ হ্যা, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।
আসওয়াদঃতুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল??
আবু মুসলিমঃ আমি ঘৃণাভরে তোর এই দাবী প্রত্যাখ্যান করছি। তুই একজন প্রতারক ও মিথ্যাবাদী।
আবু মুসলিম আল-খাওলানী (রহঃ) কে পর পর ৩ বার একই প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিবারই এই একই উত্তর দেন।
উত্তর শুনে আসওয়াদ আনাসি রাগে কাপতে লাগলো। এবং নির্দেশ দিল শহরের উপকন্ঠে বড় একটি অগ্নিকুণ্ড তৈরি করতে। যেখানে জনসম্মুখে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে।

অতঃপর আসওয়াদ আনাসি আবু মুসলিম কে লক্ষ্য করে বললোঃ হে আবু মুসলিম! তুমি যদি হকের উপর থাকো তাহলে তোমার হক যেন তোমাকে এই শাস্তি থেকে বাচিয়ে নেয়। আর যদি আমি হকের উপর থাকি তবে এই আগুনের শাস্তি থেকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবে না!! অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত হলে জনসম্মুখে আবু মুসলিম আল-খাওলানী কে মিনিজানিক এর মাধ্যমে দূর থেকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হল। নরাধম আসওয়াদ আনাসি ও তার অনুসারীরা যখন তাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেললো। ঠিক তখনি এই উম্মাত আবার খলীলী মু’জিঝা দেখার সুযোগ পেল। আসওয়াদ আনাসি ও তার অনুসারীদের হতভম্ব করে দিয়ে সকলের সামনে তিনি অগ্নিকুণ্ড থেকে স্বাভাবিকভাবে হেটে বের হয়ে আসলেন। আসওয়াদ আনাসি ও তার সাথিরা অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে শহর থেকে বহিষ্কার করে শহর প্রাচীরের বাইরে বের করে দিল।

তিনি পায়ে হেটে ইয়ামান থেকে মদিনাতে গমন করেন। মসজিদে নববীতে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যান।এবং অত্যন্ত খুশু-খুজু’র সাথে নামাজ আদায় করতে লাগলেন। লোকেরা ইতিপূর্বে এমন নামাজ খুব কমই দেখেছে। মূহুর্তে ই নতুন এই মুসাফির মুসল্লীর আগমন বার্তা পৌছে গেল মদিনার সকলের কাছে। লোকেরা দলে দলে সাক্ষাতে আসতে লাগলেন।লোকদের মাঝে হযরত উমর ফারুক রাযিঃ ও ছিলেন। তিনি নতুন মুসাফির মুসল্লীকে জিজ্ঞেস করলেন। আমাদের সেই ইয়ামানী সাথীর কি অবস্থা? যাকে নরাধম মিথ্যুক আসওয়াদ আনাসী আগুনে জ্বালাতে চেয়েছিল??
আবু মুসলিম উত্তরে বললেন,তিনি সুস্থ ও ভালো আছেন!
হযরত উমর ফারুক রাযিঃ বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি। আপনি ই কী সেই ব্যাক্তি???
তিনি উত্তর দিলেনঃ হ্যা,,,,,।
হযরত উমর রাযিঃ তাৎক্ষণিক আবু মুসলিম আল-খাওলানীর কপালে চুমু খেলেন। অতঃপর তাকে নিয়ে হযরত আবু বকর রাযিঃ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে সবিস্তারে বললেন। সব শুনে হযরত আবু বকর রাযিঃ আবু মুসলিম কে নিজের পাশে বসালেন।

অতঃপর উমর ফারুক রাযিঃ বললেনঃ সমস্ত প্রসংশা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার আগেই এই উম্মতের ইবরাহীম খলীল কে দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।

রেফারেন্সঃ
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (البداية والنهاية)
তারীখু মাদীনাতি দ্বিমাশক্ব (تاريخ مدينة دمشق)
আল-ইসতি আ’ব ফি মা’রিফাতিল আসহাব
(الإستيعاب فى معرفة الأصحاب)

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//thirsoab.com/4/4139233