>>এক বেকার বাউন্ডলে যুবকের বিয়ের আত্নকাহিনী<<

0 ১১০

11287255_826295527463740_63147846_nকাহিনীটি বলার আগে  আমাদের সম্মানিত অভিভাবকদের মহোদয়দের কাছে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর ভিষণ জানতে ইচ্ছে করছে। কেউ কি আছেন আমার এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে আমাকে একটু সহযোগীতা করবেন..??

প্রশ্নটি হলো:

বিয়ে করার ব্যাপারে একটি ছেলের তার স্ত্রীর ভরণপোষণের আর্থিক যোগ্যতা টাকার অংকে কত? কত টাকা মাসিক আয় হলে বা জমা হলে একজন তরুন বিয়ের চিন্তা করতে পারে?

বেশ কয়েক বছর আগে টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। এক তরুন গাড়ীতে (প্রাইভেট কারে) চলন্ত অবস্থায় মাকে ফোন করে বলছে, ” মা, ব্রীজের কনট্রাক্টটা পেয়ে গেছি। ……… ঢাকাতে একটা প্লটও বুকিং দিয়ে দিলাম।”

ও পাশ থেকে মা বললেন, “গাড়ী হলো, বাড়ী হলো, এবার বিয়েটা করে ফেল বাবা।”

গাড়ী, বাড়ী হওয়ার পর একজন সুন্দরী নারীকে ঘরে আনার চিন্তা করাটা হয়তো অনেকেই নিরাপদ মনে করবেন। তবে, ব্রীজের কনট্রাক্ট পাওয়ার ভাগ্য যেমন সকলের হয় না, তেমনি গাড়ী, বাড়ী (বিশেষ করে বাংলাদেশে) করার পর বিয়ে করতে হলে ছেলেটাকে হয়তো পুরো যৌবনটাই আইবুড়ো হয়ে থাকতে হবে।

তাহলে আর্থিক সামর্থ্য কতটুকু হলে বিয়ে করা যাবে? প্লিজ জানাবেন কেউ…………..???

আর আপনারা যদি প্রশ্নের উত্তর না দেন তাহলে আমি আপনাদের আমার পরিচিত এক ভাইয়ের জীবন থেকে নেয়া একটি সত্য কাহিনী শুনাতে চাই। এটি শুনলে আপনারা নিজেরাই উত্তর পেয়ে যাবেন।

কাহিনীটা ছিলো এমন-

-২৫ বছর চলে যাচ্ছে দেখে আব্বা যখন জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলেন, তখন আমার চাকুরী নেই, একেবারে কপর্দকশূন্য যাকে বলে। বিয়ের সব খরচ বাবার – কনের গহনাগাটি, পোশাক থেকে শুরু করে বৌভাতের খরচ পর্যন্ত। মোদ্দাকথা, আমার একটা ফুটো পয়সাও খরচ করার সামর্থ্য ছিল না।

আমার দেওলিয়াত্বের বিষয়টি আব্বার কাছে মৃদুস্বরে তুলতে তিনি উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে, তোমার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা তো আছেই। বৌমার থাকার জন্য তোমার ঘরটি শেয়ার করবে আর একজন নতুন মানুষের খাবারের ব্যবস্থা আমি করতে পারবো।

চাকুরী না থাকাতে তেমন অসুবিধা হয়নি। সমূদ্রে বা পাহাড়ে হানিমুনে না গেলেও শুক্লপক্ষের প্রতিটা রাত দুজনে মিলে জ্যোৎস্নায় ভিজেছি। চাঁদের আলোয় ছাদে বসে বসে গভীর রাত পর্যন্ত গল্প করেছি, এমনকি বাড়ীর পিছনের নদীর ধারে বসে শান্ত নদীর পানির ঝিকিমিকি দেখেছি, নদীতে নামার জন্য বাড়ির সাথে সান বাধানো ঘাট করা আছে, পানিতে পা ডুবিয়ে তাতে বসে থেকেছি। দুইজন মিলে ক্ষেত-খামারে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছি। নদীর ধার দিয়ে হেটে হেটে চলে গিয়েছি অনেকদূর। বাড়ীর আশে-পাশে শাক-সবজি, ফুলের গাছ লাগিয়েছি। আমি কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করেছি আর সে তাতে বীজ বুনে দিয়েছে। সেই বীজ থেকে যখন প্রথম পাতাগুলো মাটির আড়াল থেকে মাথা বের করে হেসেছে, তখন মনে হয়েছে দুনিয়াতে এর চেয়ে বেশী আনন্দের দৃশ্য আর হতে পারে না। কপর্দকশূণ্য সেই দিনগুলোই জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন হয়ে রয়েছে।

এর মধ্যে ঘটলো আরেক ঘটনা। বিয়ের ১ বছরের মধ্যে আমাদের সংসারে একেবারে আনকোরা নতুন অতিথি আসার সম্ভাবনার কথা জানা গেলো। বউ বললো, অনেক তো হলো বৃক্ষলতা দেখা, চাষাবাদ করা আর চাঁদের দিকে চেয়ে থাকা, এবার বোধ হয় আয়-রোজগারের দিকে তোমার নজর দেয়া দরকার। সে তখনও ছিল ছাত্রী, তাই হয়তো নিজেই রোজগারের চিন্তা করেনি।
11256524_826295554130404_1162008526_n
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, চাকরী খুজতে ঢাকায় এলাম আর চাকরী পেয়ে গেলাম। বেতন তেমন বেশী নয়। দুই বেডরুমের একটা ছোট বাসা ভাড়া করে যখন থাকা শুরু করলাম, তখন বাসায় ফার্নিচার বলতে ছিল মাত্র একটি জাহাজের খাট আর একটা স্টিলের আলমারি। টিভি নেই, ফ্রিজ নেই, সোফা নেই, এমনকি খাবার জন্য একটা ডাইনিং টেবিলও নেই। সেই শূন্য ঘরে ফিরে যখন ভাবতাম আমার কয়েক মাসের মেয়ে আমাকে দেখে হাসছে বা আমার কাছে আসার জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, তখন আনন্দ ধরে রাখা কষ্ট হয়ে পড়তো। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যা ছিল, তা নিয়েই আমরা এতো সুখী ছিলাম যে, কী নেই তা ভাবার অবকাশ পেতাম না। এখনও আমরা কখনো কোনো কিছুর অভাব অনুভব করি না।

পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটি আল্লাহর রাসুলে (স.) এর একটি হাদীসের কথা মনে পড়ছে। একবার রাসুল (সঃ) এর কাছে এক নারী এলেন যিনি বিয়ে করতে চান। রাসুল (সঃ) এর সাথে বেশ কয়েকজন সাহাবা ছিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কী ই নারীকে বিয়ে করতে আগ্রহী?

একজন সাহাবা বললেন যে তিনি বিয়ে করতে চান, কিন্তু তার আর্থিক সামর্থ নেই। রাসুল (সঃ) জানতে চাইলেন, তোমার কী কোনো কিছুই নেই? তিনি বললেন, তাঁর একটি লোহার আংটি আছে। তিনি তাঁকে লোহার আংটি বিক্রি করে তাই দিয়ে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করতে বললেন।

ইসলাম ধর্মে বিয়ের জন্য পুরুষের নূন্যতম আর্থিক সামর্থের বিষয় এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়।

কিন্তু পরিচিতজনদের মধ্যে দেখেছি, বিয়ের জন্য আমরা যে ধরণের প্রস্তুতি নিই, সে ধরণের প্রস্তুতি আগের যুগের রাজারা যুদ্ধে যাবার জন্যও নিতেন না। বিয়ের অনুষ্ঠানই হবে কয়েক সপ্তাহ ধরে। তাতে কয়েক হাজার লাইট জ্বলতে হবে, বর-কনের গায়ে হলুদ হবে ১সপ্তাহ ধরে, বিয়ের সময় যাতে শ্যামলা রঙ কোনভাবেই প্রকাশ হয়ে না পড়ে তার জন্য আছে বিশেষ আয়োজন, বিশেষ ধরণের উপহার-সামগ্রী, বিশেষ আচার-বিচারও আছে। আছে কার্ড ছাপানোর ব্যবস্থা। তার পর হবে বিয়ের অনুষ্ঠান। তার জন্য বিশেষ পোশাক, বিশেষ উপহার, বিশেষ কার্ড। এ উপলক্ষে বিশেষ ভাবে সাজাতে হবে বাড়ী, প্রয়োজন হবে রাজকীয় গাড়ী। তারপর বউভাত। সেখানেও কার্ড, উপহার, সাজ-সজ্জা, হাজার বাতি। তারপরেও শেষ হয় না। বর শ্বশুরবাড়ীতে গেলে পঁচিশ কেজি ওজনের রুইমাছ নিয়ে যেতে হবে, উপহার সামগ্রীর স্তুপ নিতে হবে, ইত্যাদি কত কিছু। তারপর হানিমুন। আজকাল দেশের মধ্যে হানিমুন করার কথা উঠলে মান-সম্মান একবারেই চলে যায়।

অথচ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিয়ে হলো সেই বিয়ে যে বিয়েতে কম খরচ করা হয়। কারণ যে বিয়েতে খরচ কম সে বিয়েতে বরকতও বেশি……..

সমাজে বিয়ের দিকে তাকালে (হোক তারা ইসলামিস্ট অথবা নন ইসলামিস্ট সবখানে) মনে হয় ভোগবাদীতার কত গভীরে আমরা ডুবে গেছি – এ যেন তারই পরিমাপক। এখনকার যুগে রাজা-বাদশা নেই, গলায় গজমতির হার আর ময়ুর সিংহাসন দিয়ে নিজেদের শান-শওকত দেখানোর সুযোগ নেই। সে অভাবটা আমরা মেটানোর চেষ্টা করছি বিয়ের অনুষ্ঠান দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে গায়ে হলুদ, বিয়ে কিংবা বউভাতের কার্ড ছাপাতে যে খরচ করা হয়, তা দিয়ে হয়তো একটা গ্রামকে স্বাবলম্বী করে দেয়া যায়।

এ পরিচিত অভিভাবক একবার বলেছিলো, বউকে এফোর্ড করার ক্ষমতা না হলে বিয়ে করা উচিৎ নয়। এই এফোর্ড করার বিষয়টি খুব মারাত্মক, কেননা এর কোন সীমা নেই, শেষ নেই, বিশেষ করে যদি অর্থ-বিত্তের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বছর শেষে আপনার পরিচিত কেউ বিদেশে বেড়াতে যায়। আপনার কাছে যদি এফোর্ড করার মানে তার সাথে টেক্কা দিয়ে বিদেশে বেড়ানো হয়, তাহলে এফোর্ড করাটা বড় কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা, পরিচিতজনের মধ্যে অনেকেরই অনেক টাকা থাকবে, দামী গাড়ী থাকবে, অভিজাত এলাকায় আলিশান ফ্লাট থাকবে।

আমার মনে হয়, ভোগবাদিতা বর্জনের প্রধান ধাপ হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে মানবিক হওয়া। একটি ছেলে যখন কনে খোজার সময় ফর্সা রঙ দেখে, শ্বশুরের অর্থ-বিত্ত দেখে, তখন বিষয়টি যেমন নিন্দনীয়, তেমনি একটি মেয়ে যখন হবু স্বামীর টাকাটা বড় করে দেখে, তখনও বিষয়টি একই রকম। প্রকৃতির দিকে তাকালে দেখা যাবে, সৃষ্টিজগতের আসল কাজ হচ্ছে বংশ রক্ষা। বিয়ে করে সংসার করাই হচ্ছে মানব জীবনের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক লক্ষ্য। বিয়েকে কঠিন করতে থাকলে এক সময় মানব বংশ রক্ষাই দুস্কর হয়ে পড়বে। এখনই তার কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছে। পোপকে বলতে হচ্ছে, তোমরা বিয়ে করো, পৃথিবীকে শিশুদের থেকে বঞ্চিত করো না।

মনে হচ্ছে ছোটো মুখে একটু বেশি বলে ফেললাম। সমাজের সবার চিন্তার ঠিক উল্টটা চিন্তা করে ফেললাম।
মাফ করবেন সম্মানিত অভিভাবক বৃন্দ…!!

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//zeekaihu.net/4/4139233