নামের বিকৃতি ও সামাজিক সমস্যা

0 ৯১

রুমমেট তার টেনে পড়ুয়া ভাতিজাকে নিয়ে হলে এসেছে।আগামী কয়েকমাস হলে রেখে এস.এস সি পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করবে। প্রথমদিনে রুমে ঢুকেই সরাসরি সালাম দিয়ে নিজের নামটুকু বলে দেয়।সাথে দু-চারটি হালকা কথা হয়।

 

পরের এক-দুইদিন পরীক্ষাকেন্দ্রীক ব্যস্ত থাকায় ওর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি।

গতকাল রাতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম-তোমার পুরো নাম তো আবুবকর সিদ্দীক,তাই না?

-হ্যা।

-তোমাকে কি আবুবকর বলে ডাকবো নাকি সিদ্দীক নামে ডাকবো?

-জ্বী!(কথাটা বুঝতে পারে নাই)

এবার কথাটা স্পষ্ট করার জন্য বললাম,তোমাকে অন্যরা কি নামে ডাকে?

-অন্যরা বক্কার বলে ডাকে।

-ঠিক আছে।আমি তোমাকে আবুবকর বলে ডাকবো।

 

নামের এই বিকৃতিটা আমাদের জন্য নতুন নয়।হিন্দু নামগুলো বাংলা হওয়ায় খুব একটা বিকৃতি হয়না।আর বিকৃতি হলেও খুব একটা সমস্যা হয়না। কিন্তু মুসলিম সমাজের অবস্হা খুবই করুণ।একদিকে ভাষাগত সমস্যা,অপরদিকে অজ্ঞতা।এই দুইটি মিলিয়ে মুসলিম নামের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে।

 

গ্রামে দেখা যায়,একজনের একটি চমৎকার নামকে বিকৃতি করে কত খারাপ বানিয়ে ফেলে।দেখা যাচ্ছে,আসল নাম আবুল কাশেম।কিন্তু মানুষ উনাকে ডাকছে কাউচ্ছা বলে।আবার একজনের নাম সাদত আলী।কিন্তু ডাকা হচ্ছে সাউদ্দা বলে। আবার যাদেরকে এই নামে ডাকা হচ্ছে,তাদের মাঝে এই নামের বিকৃতি নিয়ে সামান্যতম বিকারগ্রস্ততা দেখা যায়না।

 

আবার ছোটবেলা থেকে আকার-আকৃতি,গড়ন-গঠণ,রং দেখে ডাকনাম দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।কাউকে কালো দেখে কাইল্ল্যা,আবার কাউকে লাল দেখে লালে নামে ডাকা হচ্ছে।আবার কেউ খাটো দেখে বাইট্টা নামে ডাকা হচ্ছে। আবার কারো কোন খারাপ বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব দেখে ঐটাকেই ডাকনাম বানিয়ে ফেলা হয়।অথচ শিশুদেরকে এই নামে ছোটবেলা থেকে ডাকাতে ওরা এই নামেই অভ্যস্ত হয়ে যায়।পরবর্তীতে কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে আসল নাম না বলে ঐ ডাকনামটিই বলে দেয়।

 

আবার কারো আরবী নামটি অনেক চমৎকার।কিন্তু আরবীর ঐ নামটি বাংলায় ভিন্ন অর্থে প্রকাশ করা হয়।কারো নাম যদি মদন আলী,তাহলে তার নামটিকে স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়।আবার ‘মফিজুর রহমান’নামের ক্ষেত্রেও বিকৃতি সুরে নামটি ডাকা হয়। আবার দেখা যায়,একজন একটা ভুল করলো।তার নামটি ‘মকবুল’ হওয়ায় অনেকেই বলে বসে,ওর নামেই তো ভুল শব্দটি রয়েছে,তাহলে সে ভুল করবে নাতো কে করবে!

এছাড়া আরো বিভিন্ন নাম অনুপাতে অনেককে অপয়া বলা হয়।

 

একটি শিশুর নামকরণ করা হয় শব্দের অর্থের ভিত্তিতে।প্রতিটি বাবা-মা ই চায়,তার সন্তানের নামটি সুন্দর অর্থবিশিষ্ট হোক এবং ঐ নামের বৈশিষ্ট্যটি তার মধ্যে ফুটে উঠুক। কিন্তু পরিবেশ পরিস্হিতির কারণে আসল নামটিকে হারিয়ে ফেলে ভিন্ন নামে আবির্ভূত হয়।ফলে আসল নামের বৈশিষ্ট্য থাকে,সেই বৈশিষ্ট্য কোনসময় পাওয়া যায়না।এমনকি অনেকে তার আসল নামের অর্থটিও মনে রাখতে পারেনা।

 

কিন্তু ঘটনাটি যদি এমনটি না হয়ে এর বিপরীত হতো,তাহলে কেমন হতো!যদি ঐ শিশুটির নামকরণকে স্বার্থক করার জন্য ঐ নামের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো,তাহলে সেটি ঐ পরিবারের জন্য ভালো হতো,ঐ পরিবারের জন্য ভালো হতো,এমনকি দেশের জন্যও সেটি কল্যাণকর হতো।

 

এই সমস্যাটা শিক্ষিত সমাজে খুব কম।যেহেতু এখানে পরস্পরকে সম্মান করে চলতে হয়,তাই চেষ্টা করলেও কেউ ভিন্ন নামে কাউকে ডাকতে পারেনা। কিন্তু অশিক্ষিত সমাজে এই সমস্যাটা প্রকট।কেউ কাউকে সম্মান করে চলতে রাজী নয়।একজন অপরজনকে ভিন্ন নামে ডাকছে,আর ছোটরা সেটা শিখে তারা বড়দেরকেও একই নামে ডাকছে।

 

এই সমস্যার ফলাফল হচ্ছে,আমরা আমাদের স্বভাবগত ও আচরণগত সমস্যার কারণে বিশ্বের দরবারে নিজেদের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি না করে আরো নিচুস্তরে নামিয়ে নিয়ে আসছি।।

Visits: 1

মন্তব্য
Loading...
//dubzenom.com/4/4139233