সংখ্যার অদ্ভুত ইতিহাস ( সংখ্যা পর্ব-১ )
কিছু কিছু সংখ্যা আছে, যা সাধারণ হিসাবে মেলে না। ধাঁধা কাটতে চায় না। তবে নেপথ্যকাহিনী জানা থাকলে আলীবাবার সিসিম ফাঁক বলার মতো করেই বন্ধ দরজাটা খুলে যায়। রিডার্স ডাইজেস্টে ড্যান লুইস অবলম্বনে এমন কয়েকটি সংখ্যা নিয়েই লেখা……….
ইলেভেন ও টুয়েলভ
ইংরেজিতে টেন (১০)-এর পর ইলেভেন (১১), টুয়েলভ (১২) কেন? কেন নয় ওয়ানটিন ও টুটিন? সংখ্যা দু’টির নামকরণে এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ইলেভেন এসেছে জার্মান পরিভাষা ‘আইনলিফ’ থেকে। অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘বাকি এক’। এ ক্ষেত্রে অর্থ হলো কোনো কিছুর ১০ গণনা করার পর বাকি থাকা ‘আরো এক’। টুয়েলভের ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য। কিন্তু ১৩ থেকে ১৯ পর্যন্ত গণনার ক্ষেত্রে এই ‘লিফ’ কেন আর অব্যাহত থাকেনি, তার ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন আর কেউ তা জানে না।
দিনে ২০০০ ক্যালরি
এই সংখ্যাটা চিন্তাভাবনা না করে নেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগই জানিয়েছে, দিনে আমাদের গড়ে দুই হাজার ক্যালরি গ্রহণ করা দরকার। তবে মার্কিন কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি লোকের দিনে গড়ে ২৩৫০ ক্যালরি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে একটি মহা সতর্কবাণী আছে : ওই ২৩৫০ ক্যালরি মানতে গেলে লোকজনকে অনেক বেশি খেতে হবে। কারণ বেশির ভাগ নারীর গড়ে পুরুষদের চেয়ে কম খাবার প্রয়োজন হয়। আবার বয়স্ক নারীদের দিনে ১৬০০ ক্যালরি হলেই চলে। ১৯৯৩ সালে মার্কিন কৃষি বিভাগ অবস্থানে পরিবর্তন এনে বলল, ২,০০০ ক্যালরির হিসাব রাখা অনেক সহজ। ১,৯০০ বা ২,৩০০ ক্যালরি নিয়ে হিসাব করলে অনেক জটিলতারও সৃষ্টি হয়। ফলে মাঝামাঝি ২,০০০ ক্যালরি গ্রহণযোগ্য হয়ে গেল।
২৮ দিনে ফেব্রুয়ারি
ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১১ মাসই ৩০ বা ৩১ দিনের। ফেব্রুয়ারিটা কেন ২৮ দিনের হলো? ৩১ দিনবিশিষ্ট দু’টি মাস থেকে দু’টি দিন অনায়াসেই এর সাথে যোগ করা যেত। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। প্রথম দিককার একটি রোমান ক্যালেন্ডারে (খ্রিষ্টপূর্ব সময়কালে) শীতের মাসগুলোর হিসাব রাখা হতো না। তাতে কেবল ৩০৪ দিন এবং ১০ মাস (মার্চ থেকে ডিসেম্বর) ছিল। এগুলোর ছয়টি ছিল ৩০ দিনের, বাকি চারটি ছিল ৩১ দিনের। কিংবদন্তী অনুযায়ী, রোমের দ্বিতীয় রাজা অতিরিক্ত দু’টি মাস (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) এবং ৫০টি দিন যোগ করেন। মাস দু’টিকে দীর্ঘায়িত করার জন্য (এবং জোড় সংখ্যার প্রতি রোমান কুসংস্কার বজায় রাখার জন্য) তিনি ৩০ দিনের মাসগুলো থেকে এক দিন করে কমিয়ে দিলেন। ফলে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসের জন্য থাকল মোট ৫৬ দিন (কিংবা উভয় মাসের প্রতিটির জন্য ২৮ দিন করে)। আবারো কুসংস্কার জয়ী হলো, যখন জানুয়ারির সাথে এক যোগ করে সেটাকে ২৯ করা হলো। ফেব্রুয়ারি সেই ২৮ দিনেই রয়ে গেল। এই মাসটিকে ঘোষণা করা হলো ‘চিরন্তন ঈশ্বরের’ মাস হিসেবে। এভাবেই সংক্ষিপ্ততম মাসটির জন্ম হলো।
চার ডিজিটের পিন নম্বর
এটিএম-ব্যবস্থাটি প্রবর্তন করেন স্কটল্যান্ডের জন শেফার্ড-ব্যারন নামের এক লোক, ১৯৬৭ সালে। তিনি ভাবতেন, চকোলেট বারের মতো কেন সহজে নগদ টাকাও হাতে পাওয়া যাবে না, নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হবে? তবে সমস্যা হলো, আপনিই যে সে-ই ব্যক্তি, তা শনাক্ত করাটা ছিল কঠিন কাজ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য শেফার্ড-ব্যারন বিশেষ ধরনের কাগজ চালু করলেন। সেটাই আজকের ডেবিট কার্ডের পূর্বপুরুষ। মেশিন থেকে টাকা তুলতে হলে ব্যারনের কাগজগুলোর প্রতিটিতে নম্বর দিতে হতোÑ যেটাকে বলা হয় ব্যক্তি শনাক্তকরণ সংখ্যা (পারসোনাল আইডেনটিফিকেশন নাম্বার বা পিআইএন বা পিন)। এই নম্বরটি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে মনে রাখতে হতো।
কিন্তু সমস্যা হলো, শেফার্ড-ব্যারনকে সেনাবাহিনী আগেই ছয় ডিজিটের একটি আইডি নম্বর দিয়েছিল। এ কারণে তিনিও চেয়েছিলেন তার মেশিনে ছয় ডিজিটের পিন নম্বর চালু করতে। তা-ই হতে যাচ্ছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন, আর কেউ নয়, তার স্ত্রী। তার স্ত্রী মনে করতেন, ছয় অঙ্কের সংখ্যা মনে রাখা খুবই কঠিন। ফলে আমরা এখন পেলাম চার ডিজিটের পিন কোড।
ম্যারাথনে ২৬.২ মাইল
গ্রিসের ম্যারাথন থেকে এথেন্সে এক গ্রিক সৈনিকের দৌড়ে আসার কিংবদন্তী হিসেবে অলিম্পিক গেমসে ম্যারাথন নামের দৌড় প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। এ কাহিনী বলা যায়, সবাই জানে। তবে এখানেই শেষ নয়। ১৮৯৬ সালের প্রথম অলিম্পিক গেমসে আধুনিক ম্যারাথনের জন্ম হয়েছিল ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট হিসেবে। তখন ম্যারাথন ময়দান থেকে এথেন্সের দূরত্বের হিসাব মাথায় রেখে প্রায় ২৫ মাইলের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯০৮ সালে লন্ডন গেমসের আয়োজকেরা এই প্রতিযোগিতায় একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে চাইলেন। তারা দৌড় শুরুর স্থান নির্ধারণ করলেন সৌন্দর্যমণ্ডিত উইন্ডসর ক্যাসল থেকে এবং শেষ বিন্দু ধরলেন হোয়াইট সিটি স্টেডিয়ামে রয়্যাল বক্সের সামনে। এই দূরত্বটা ছিল ২৬.২২ মাইল। ১৯২৪ সালে আয়োজকেরা বিভিন্ন গেমসের দূরত্বগুলো তুলনা করে একটি আদর্শ মান গ্রহণ করতে চাইলেন। তখনই চালু হলো ওই সংখ্যা। তবে ১৯১২ ও ১৯২০ সালে কিন্তু ২৬.২২ মাইলের আদর্শ গ্রহণ করা হয়নি। ওই দু’বার যথাক্রমে ২৪.৯৮ মাইল ও ২৬.৫৬ মাইল দৌড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
জরুরি কল ৯১১
প্রথম দিকের টেলিফোনে নম্বর ছিল না। অপারেটরকে নাম ধরে ধরে সংযোগ দিতে হতো। টেলিফোন বিস্তারের সাথে সাথে সংখ্যার প্রচলন হলো। এই প্রক্রিয়ায় সার্বজনীন জরুরি কোডের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিলো। ১৯৬৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষিত একটি কমিশন দেশভিত্তিক একটি সমাধানের প্রস্তাব করল। ওই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ টেলিফোন পরিচালনা করত এটি অ্যান্ড টি। তারাই ৯১১ সংখ্যাটি পছন্দ করল। কারণ এটা ব্যবহারযোগ্য, মনে রাখাও সহজ এবং রোটারি ফোনেও তাড়াতাড়ি ডায়াল করা যায়।
ঘণ্টায় ৫৫ মাইল
এই সাধারণ গতিসীমার পেছনের কারণ কী? গ্যাসোলিন ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী তেল সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস ও নিক্সন প্রশাসন ‘ইমারজেন্সি হাইওয়ে এনার্জি কনজারভেশন অ্যাক্ট’ প্রবর্তন করে। মহাসড়কগুলোতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৫ মাইল বেগে গাড়ি চালানোর নিয়ম এই আশায় প্রবর্তন করা হয় যে, এর ফলে তেলের ব্যবহার হবে কম।
১৯৮৭ সালে আইনটি পরিবর্তন করে কোনো কোনো এলাকায় ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগেও গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৯৫ সালে সেটিও বাতিল করা হয়। তবে ঘণ্টায় ৫৫ মাইল বেগে গাড়ি চালানো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে অটোমোবাইল শিল্পে ব্যাপক অগ্রগতি হওয়ায় অনেকেই আরো দ্রুত গাড়ি চালানোর সুযোগ চাচ্ছেন।
( সংগৃহীত )
Visits: 1