নামের বিড়ম্বনা
এক শিক্ষক তার ছাত্রকে জিজ্ঞেস করছেন-তোমার নাম কি?
ছাত্র বললো-আব্দুল কুদ্দুস।
শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে বললো-বেয়াদব ছেলে।নামের পূর্বে মোহাম্মদ বসাতে হয়,সেটিও জানোনা!
পরেরদিন…..
শিক্ষক ঐ ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন-আজ কি দিয়ে খেয়ে এসেছো?
ছাত্রও আদব বজায় রেখে বললো-মোহাম্মদ কদু দিয়ে।
উপরের ঘটনাটি কৌতুক হলেও আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র এটি।মানুষের মনমেজাজে এটি ঢুকে গেছে যে,নামের ক্ষেত্রে ‘মোহাম্মদ’ শব্দ ছাড়া কোন নাম চিন্তা করাই যায়না। আমি এই ঘটনার শিকার বাস্তব জীবনে অনেকবার হয়েছি।
নামের সাথে কখনো মোহাম্মদ যুক্ত করিনি।যখনই বছরের শুরুতে নতুন ক্লাসে যেতাম,তখন স্যার নাম জিজ্ঞেস করার পর নাম বললে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন।
বলতেন-তোমার নামে মোহাম্মদ নাই কেন?
বলতাম-মোহাম্মদ কেনো থাকবে?
বললেন-আমরা যে মোহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত,সেটি বুঝানোর জন্যই মোহাম্মদ শব্দ ব্যবহার করতে হয়।
একদিন তো এক স্যার বলেই বসলেন-তুই কি হিন্দু?
বললাম-নামের সাথে মোহাম্মদ না থাকলে হিন্দু হয়ে যাবে কেন?
স্যার বললেন-মোহাম্মদ শব্দ না থাকলে বুঝা যায়না,সে কোন ধর্মের!
বললাম-হিন্দুরা কি আরবী নাম রাখে?বা কোন মুসলমান কি হিন্দুদের নামের মত করে নাম রাখে?আমি কোনদিনও শুনি নাই,কোন সাহাবী উনার নামের সাথে মোহাম্মদ শব্দ যোগ করে বুঝিয়েছেন,তিনি মোহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত।
স্যার টাশকি খাইলেন।আমতা আমতা করে বললেন-না…মানে….হইলো….আমরা আর তারা কি এক!
মাঝে মাঝে কোন হুজুর নামের সাথে মোহাম্মদ যোগ করার মাহাত্ব্য বুঝিয়ে উপদেশ দিতেন।কিন্তু তারপরও নামের সাথে নামের সাথে মোহাম্মদ শব্দ যোগ করা হয়নি।
পরবর্তী জীবনে যখন ভার্সিটি ক্যাম্পাসে আসি,তখন আবার অন্য পরিস্হিতির সম্মুখীন হই।কারো নাম শুনে বুঝতে পারিনা,সে মুসলিম নাকি হিন্দু।দেখা গেলো,নাম শুনে ভেবে বসে আছি,সে হিন্দু।কিন্তু আসলে মুসলিম।
ঘটনাটা এমন….ক্যাম্পাসে অনেক ছেলেরাই নিক নাম ব্যবহার করে।সেটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হিন্দু নাম অনুকরনে হয়।
একদিন এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়।উনি পরিচয় দেন ‘অঞ্জন’বলে….আচার ব্যবহার দেখে মুসলিম ভেবেছিলাম।কিছুক্ষণ পরে বললাম-চলুন নামাজ পড়ে আসি। তিনি বললেন-আমি হিন্দু। 🙁
আবার দেখা গেলো,কারো নাম শুনে মনে করলাম,তিনি হিন্দু।কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলাম-আপনার পুরো নাম কি? বললেন-আব্দুল হালিম।ডাকনাম-তাপস।
একদিন এক রিক্সাওয়ালার সাথে কথা প্রসঙ্গে নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম।বললেন-আমি দীপু।
বললাম-আপনি কি হিন্দু না মুসলিম?
বললেন-পুরো নাম দীপংকর দাস।আমি হিন্দু।
এই সমস্যায় বড় কষ্টে আছি।এখন নামের বিড়ম্বনায় পড়ে এইসব ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেছি।নাম শুনে শুধু ধরে নেই,সেও একজন মানুষ।ধর্ম-অধর্ম ভেবে ব্যক্তি যাচাই করিনা।
নামের এই বিড়ম্বনার ঘটনাগুলো আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যাবোধেরই অবক্ষয়।সমাজ ধীরে ধীরে অসামাজিকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।মানুষের মন-মেজাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের নৈতিক মূল্যাবোধের অবক্ষয় ঘটে চলেছে।
বর্তমানে কিছুই বুঝা যাবেনা,ভবিষ্যতে কি ঘটবে।তবে ভবিষ্যৎ বলবে,আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সামাজিক মূল্যাবোধ কোথায় নিয়ে যায়।
Visits: 3