ঘুরে আসুন ঐতিহ্যময় রাজশাহী

নির্মল, দুষণমুক্ত শহর হিসেবে রাজশাহীর পরিচিতি আজ বিশ্বজোড়া। রাজশাহী জেলা বিশেষ করে রাজশাহী শহর একইসাথে বিভিন্ন নামে পরিচিত, রেশম নগরী, শিক্ষা নগরী, আমের রাজধানী, শান্তির শহর, সবুজ নগরী অন্যতম। এসব প্রত্যেকটা বিশেষণই শুধু রাজশাহীকেই মানায়। রাজশাহীর সিল্ক দেশের সুনামের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পরেছে সারা বিশ্বে, রাজশাহীতে রয়েছে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিসঠান, রয়েছে সুশিক্ষার সুন্দর পরিবেশ।

বাংলাদেশের আপামর জনগণ ভালো আম বলতে রাজশাহীর আমকেই চেনে। রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামুলক ভালো। সারা রাজশাহীতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। রাজশাহী শহর ছিমছাম সাজানো গোজানো একটা শহর। যে একবার রাজশাহীতে এসেছে, রাজশাহীরর প্রশংসা অবশ্যই তার মুখে শুনবেন।

রাজশাহীতে রয়েছে দেখার মতো অনেক স্থান। আজ রাজশাহীর কিছু দর্শণীয় স্থান আপনাদের কাছে তুলে ধরছি:

# পুঠিয়া রাজবাড়ী

রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কিঃমিঃ উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। বাসে করে দেশের যে কোন স্থান হতে পুঠিয়া আসা যায় এবং ট্রেনে করে নাটোর অথবা রাজশাহী নেমেও সড়কপথে সহজে আসা যায়।

পুঠিয়া রাজবাড়ি
# বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

রাজশাহী জিরোপয়েন্ট থেকে আনুমানিক ৮০০ মিটার পশ্চিমদিকে প্রধান সড়কের উত্তরে অবস্থিত রিক্সাতে,অটোতে যাওয়া যায়। এই জাদুঘর বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। বিভিন্ন প্রাচীন প্রাচীন নিদর্শন দিয়ে সাজানো এই জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা।

বরেন্দ্র জাদুঘর
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
# শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

জিরোপয়েন্টথেকে পশ্চিমদিকে আনুমানিক ৩ কি.মি. কোর্ট এর দিকে, প্রধান রাস্তার উত্তর পার্শ্বে, রিক্সা, অটোতে যাওয়াযায়। জিরোপয়েন্টথেকে পশ্চিমদিকে আনুমানিক ৩ কি.মি. কোর্ট এর দিকে, প্রধান রাস্তার উত্তর পার্শ্বে। পিকনিক স্পট হিসেবে রাজশাহী বিভাগে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা লেক
# জিয়া শিশু পার্ক

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে ময়লা ফেলার ভাগার হতে শিশুদের নির্মল বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হওয়া জিয়া শিশু পার্ক রাজশাহী শহরে নওদাপাড়া, বিমানবন্দর রোডের পাশেই অবস্থিত। এই পার্কটি অনেকটা ফ্যান্টাসি কিন্ডম এর আদলে করা হয়েছে। বেশ কিছু আধুনিক রাইড রয়েছে পার্কটিতে।

জিয়া পার্ক
জিয়া পার্ক
# পদ্মার পাড়

রাজশাহী শহর পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত। তাই শহরের মানুষ একটু সময় পেলেই ছুটে যায় পদ্মার পাড়ে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পদ্মার পাড়কে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে যাচ্ছে। বড়কুঠি এলাকা, পদ্মা গার্ডেন, লালনশাহ মুক্ত মঞ্চ, আই বাঁধ, টি-বাঁধ, শিমলা পার্ক, সিমান্তে নোংগর তারই ফসল। এজন্য দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে রাজশাহীর পদ্মার পাড় একটু ভিন্নভাবে গড়ে উঠছে।

বড় কুঠি
পদ্মার পাড়

 




পদ্মা গার্ডেন
লালনশাহ মুক্ত মঞ্চ পদ্মা পাড়
আই বাঁধ পদ্মার পাড়

 

# বাঘা মসজিদ

বাঘা মসজিদ মুসলিম ইতিহাসের একটি নিদর্শন। রাজশাহী বাস স্টান্ড থেকে ৪৫/- ভাড়া নিবে। দেড় থেকে দুইঘন্টা লাগবে। মুল সড়কের পাশেই মসজিদটি। মসজিদের সাথে রয়েছে বিশাল এক দিঘী।

বাঘা মসজিদ

 

# হযরত শাহমখদুম রুপোশ (রা) এর মাজার

পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে মহান এএই সাধকের মাজার। রাজশাহীর অন্যতম পুন্যস্থান। রাজশাহী জিরো পয়েন্ট থেকে ২ কি:মি: দূরে। অটো অথবা হেটেই যাওয়া যায়। এখানে গেলে পুন্য ব্যক্তির পরিবেশে আপনার মন হয়ে উঠবে নির্মল।

হযরত শাহমখদুম রুপোশ (রা) এর মাজার

 

# রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষানগরী রাজশাহীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক ছায়াঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয় যেকারোরই মন কেড়ে নিবে। রাজশাহী শহরের প্রবেশমুখে মহাসড়কের পাশেই বিনোদপুর নামক স্থানে এর অবস্থান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাষনিক ভবন
সাবাশ বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
#পোস্টাল একাডেমী

বাংলাদেশের একমাত্র পোস্টাল একাডেমী রয়েছে রাজশাহীতে। শহরের মধ্যেই অবস্থিত পোস্টাল একাডেমী। বাস স্ট্যান্ড বা রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২ থেকে আড়াই কিমি দুরত্বে অবস্থিত। জাতীয়ভাবে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮২ সালে পোস্টাল একাডেমী, রাজশাহীর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে এটি বর্তমান রূপে ও অবস্থানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও পুনঃগঠিত হয়। তবে এ একাডেমীটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিকেই গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে চুড়ান্তভাবে এ একাডেমীটি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একাডেমী কর্তৃক ৪৯৩টি কোর্স পরিচালনা করা হয়। ইন্ডাকশন কোর্স, পোস্টাল ম্যানেজমেন্ট কোর্স, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিপণন, জনসংযোগ ইত্যাদির উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ।

পোস্টাল একাডেমী
পোস্টম্যান ভাস্কর্য, পোস্টাল একাডেমী

# হাওয়াখানায

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর গ্রামে হাওয়াখানা নামে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কে তারাপুর মোড় হতে দক্ষিণ দিকে ১ কিলোমিটার হেঁটে অথবা রিক্সা ভ্যানে করে যাওয়া যায়।

হাওয়াখানা

 

# নিশিন্দা রাজের ধ্বংসস্তুপ

রাজশাহী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে তাহেরপুর পৌরসভা বা আলোকনগর, তারপর পায়ে হেঁটে অথবা ভ্যানে যাওয়া যায়। রাজশাহী জেলা বাগমারা উপজেলা হামিরকুৎসা ইউনিয়ন আলোকনগর সকোপাড়া খলিফা পাড়ায় অবস্থিত। তাহেরপুর রাজবাড়ি। বাংলার বার ভুইয়ার এক জন তাহের ভুইয়ার রাজ প্রাশাদ। পরবর্তিতে সেটা রাজা কংশনারায়নের প্রাসাদ। হিন্দুদের সর্ব প্রথম দুর্গাপুজার স্থান।

নিশিন্দা রাজের ধ্বংসস্তুপ

 

এছাড়াও রয়েছে রেশম বোর্ড, হযরত শাহমখদুম বিমানবন্দর, সারদা পুলিশ একাডেমী, রাজশাহী কলেজ, সহ বেশকিছু দর্শণীয় স্থান। রাজশাহীর সাথে সারা দেশের সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যোগাযোগ রয়েছে। রয়েছে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল। তাই দেরী না করে আজই রাজশাহী ট্যুরের প্লান করে ফেলুন।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যে কোনো বাসে চড়ে পুঠিয়া নামা যায়। রাজশাহী থেকে পুঠিয়ার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে চড়ে আসতে হবে পুঠিয়া। ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে গ্রীন লাইন ও দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

এছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি পরিবহনের বাস রাজশাহী যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস।
মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস।

ভাড়া এসি বার্থ ৯৪০ টাকা। এসি সিট ৬৩০ টাকা। স্নিগ্ধা ৫২৫ টাকা। শোভন চেয়ার ৩১৫ টাকা।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় রাজশাহীতে।

থাকার জায়গা

পুঠিয়ায় পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। ভ্রমণে গেলে রাত যাপন করার জন্য রাজশাহীই ভালো জায়গা। এ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাওয়া যাবে।

অন্যতম হোটেলগুলো হল: রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, সাহেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল, শিরোইলে হকস্‌ ইন, লক্ষীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি, সাহেব বাজারে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল।

Visits: 12

History-ইতিহাসRajshahi-রাজশাহীঘুরে আসুন ঐতিহ্যময় রাজশাহী
  • ইতিহাস-ঐতিহ্য
  • দেশ-বিদেশ
  • ভ্রমন
  • সামাজিক
Comments (০)
Add Comment