চলো আশা জাগাই মনে ……

 
কখনও কখনও কিছু দলবদ্ধ বা একক মানুষ আমার চোখে পড়েছে যারা কোন বিপদগ্রস্থ লোককে বা একান্ত নিরুপায় হয়ে যখন কেউ তাদের কাছে সাহায্য বা পরামর্শের জন্য আসে তখন তাদেরকে প্রথমেই বিভিন্ন রকম উদ্ভট ও নেগেটিভ কথাবার্তা বলে মনের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে ….. অথচ মানুষের নাজুক এই সময়গুলোতে হতাশার কথা না বলে যদি আশা জাগানিয়া কথা বলা যায় তাহলে কূল হারানো ব্যক্তিটিও অকূলে কূল পায় ।

আমার মনে হয় কোন ব্যাক্তির যদি বিপদগ্রস্থ মানুষ দেখে মনের কোণে সামান্য হলেও দয়ার উদ্রেক হয়ে থাকে তাহলে সে কখনোই একজন বিপদগ্রস্থ বা হতাশ লোককে আলোকের সন্ধান না দিয়ে আলো হতে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিতে পারতোনা…।

যারা অপরের দুঃখকে আরো বেশি ঘনীভূত করতে চায় ওরাই কেবল এই ধরনের কথা গুলো বলতে পারে …..এক্ষেত্রে যদি বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির উপকারের উদ্দেশ্যে অতি বাস্তব নেগেটিভ কথাগুলো বলা হয় তাহলে তাতে আমার তেমন আপত্তি নেই …..কিন্তু যখন কোন মানুষকে উদ্ভট অবাস্তব কথাবার্তা বলে দমিয়ে দেয়া হয় সেখানেই আমার যত আপত্তি ।
কিছু কিছু মানুষ ছোট বাচ্চাদেরকেও বিভিন্ন রকম ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে চান যেখানে খুব সহজেই ওদের কে পজিটিভলিও ট্রিট করা যায় …..।

এ বিষয়ে কিছু উদাহরণ টেনে আমি আমার বক্তব্যকে পরিষ্কার করতে চাই….যেমন :
উদাহরণ : ১. মিসেস আনোয়ারা ! বয়স ৭০ এর কাছাকাছি । তিনি আজীবন নিজেকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করেছেন…. ।কখনোই কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা কোনো সমস্যায় ধর্মের বিধান মেনে চলার চেষ্টা করেননি এমনকী তিনি ধর্মীয় বিধি – বিধান – অনুশাসনকে বিভিন্ন সময় অমান্যই করেছেন এবং যারা ধার্মিক তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেছেন , কখনো কখনো আড়ালে আবডালে তাদের মুন্ডুপাতও করেছেন ।
কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে যখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে তাঁর নীতি ভুল , তাঁর মনগড়া বিধানের চেয়ে ধর্মীয় বিধান অনেক বেশি শক্তিশালী এবং কল্যাণকর তখন তিনি ইসলামের দিকে ঝুঁকতে থাকেন এবং ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় জানতে ইসলামপন্থি ঐ সমস্ত লোকদের দ্বারস্থ হতে থাকেন যাদের সাথে একসময় উনার দা- কুমড়া সম্পর্ক ছিল …..।

কিন্তু সে সমস্ত ধার্মিক লোকজন যাঁরা সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠতে পারেননি তাঁরা আনোয়ারা বেগমকে ইসলামের বিধানগুলো অত্যন্ত জটিল ভাবে বলতে থাকেন… এবং এটাও বলেন যে ঠিক এইভাবে না মানলে ইসলাম পালন করা হবেনা…!! মিসেস আনোয়ারা সারাজীবনে যেখানে ঠিকমতো নামাজই পড়েননি সেখানে ফরজ পাঁচ ওয়াক্তের বাইরেও নিয়ম করে নফল নামাজ পড়া এবং সারাদিন অসংখ্য দোয়া এবং কোন্ নামাজের কোন্ রাকাতে কোন্ সুরার পরে কোন্ সুরা এবং কোন্ দোয়া কখন পড়তে হবে ?? এ সবকিছুই কেমন যেন গুলিয়ে যায় ……।তিনি হাজারো চেষ্টা করেও নিখুঁত ভাবে এই কাজগুলো করতে পারেন না …কোন না কোন ভুল হয়েই যায় ।
আনোয়ারা বেগম হতাশ হয়ে পড়েন …..এবং ভাবতে থাকেন ” আমার কি হবে ?? আমি কি আমার সারা জীবনের গুনাহের মাফ পাবোনা ?? এভাবেই কি আমাকে সকল গুনাহর বোঝা নিয়ে এই দুনিয়া ত্যাগ করতে হবে ??”
যেখানে মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন ” তোমরা ইসলামকে মানুষের জন্য সহজ করো কঠিন করো না ” সেখানে এরা এভাবেই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ইসলামের কান্ডারির দায়িত্ব পালন করছে!!
আবার আরেকটি হাদিসে আছে (ভাবার্থ এরকম)- যখন কোন ব্যাক্তি তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে চায় তখন তিনি ঐ ব্যাক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন , যে কিনা মরুভূমিতে হারানো উট ফিরে পেয়ে খুশির আতিশয্যে ভুল কথা বলে ফেলে !! অথচ এই সমস্ত তথাকথিত বক ধার্মিকেরা সঠিক পথে ফিরে আসতে ইচ্ছুক মানুষদের পথে জটিলতার সৃষ্টি করে , হতাশার কথা বলে আবার তাদেরকে অন্ধকারেই ঠেলে দেয়….।

উদাহরণ – ২: নায়লা আজ মা হয়েছে ….!!এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের মা !! কিন্ত ওর মন ভাল নেই !! কি করে থাকবে ! ওর বাচ্চা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে ফলে তাকে হরেকরকম কথা শুনতে হচ্ছে ….. ।নায়লার আত্মীয়- স্বজন যারাই বাচ্চা দেখতে এসেছে ….একেকজন একেকরকম মন্তব্য করছে…..হায় ! হায়! এ কেমন বাচ্চা হয়েছে ?? এমন বাচ্চা তো আগে দেখিনি……এবং ওদের কথার মধ্যে বাচ্চা যে তার এবনরমাল !! এই কথাটা পরিষ্কার !! নায়লার সামনেই ওরা বিভিন্ন রকম মন্তব্য করতে কুন্ঠিত হচ্ছেনা…..।পাশাপাশি দু তিন মাস বা এক বছরের মধ্যে কোথায় কার কার বাচ্চা হয়েছে এবং ঐ বাচ্চাগুলো কতটা হেলদি এবং মোটাসোটা ছিল সেই গল্প গুলো গাল ভরে করে চলেছে ……. কতক্ষণ আর এসব কথা সহ্য করা যায় !! নায়লা মনে মনে নার্ভাস হয়ে পড়ল ……।
এর মাঝে শাশুড়ি হাতে এক বিশাল নিয়মের ফর্দ ধরিয়ে দিলেন ……যেখানে কখন কি করতে হবে তার বিবরণ….।যখন তার নিজেকেও বিশ্রাম নিতে হবে সেখানে তিনি এমন লিষ্ট ধরিয়ে দিলেন যেখানে সে সুযোগ নেই বললেই চলে ….!!সে শুধু মিনমিন করে একবার বলতে পারল : মা ! ডাক্তার তো এত কিছু করতে বলেনি ….আর বাচ্চা অসুস্থ হলে ডাক্তাররা তো সে কথা বলতো….কই ! উনারা তো সেরকম কিছু বলেননি …….তিনি তাকে কথার সুযোগ না দিয়ে বলতে লাগলেন : বাদ দাও !! এইসব ডাক্তারদের কথা! ডাক্তাররা কি জানে ?? আর জানলেও কি সব বলে নাকি ?? নায়লার মা ও এই কথার সাথে তাল মেলাতে লাগলেন….।শাশুড়ি যাওয়ার আগে এটাও বলে গেলেন – আমার একমাত্র নাতি! ওর যত্নের যেন কোনও কমতি না হয়…আর সবকিছু তুমি নিজের হাতে করবে ….কাজের লোকের উপরে ছেড়ে দিবেনা. …। আল্লাহ না করুক বাচ্চা যেন প্রতিবন্ধী না হয় ??
সবার এত এত কথা শুনে নায়লার ও মনে হতে লাগল….ওর বাচ্চা আসলেই এবনরমাল হয়েছে ….সে রাতদিন বাচ্চার যত্ন করে আর লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি ফেলে …..এভাবে কতদিন ? একসময় সে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ।
অথচ কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল ওর সন্তান প্রতিবন্ধী তো দূরের কথা বরং পুরোপুরি সুস্থ এবং সমবয়সী অন্য বাচ্চাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে …..।কিন্তু , ওর আত্মীয় – পরিজনরা বুঝতেও পারল না অজ্ঞতা বশত: নেগেটিভ কথা গুলো সদ্য প্রসূতি মায়ের সামনে বলে ওরা নায়লার কি ক্ষতি করেছে……!! ওরা যদি এগুলো না বলতো তাহলে নায়লাকে এতটা ষ্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো বলে মনে হয়না…. ।এভাবে ওর যে শারীরিক – মানসিক ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে ওর কত সময় লাগবে ?? তার খোঁজ ওনারা কি রাখবেন….??

উদাহরণ ৩ : মিসেস রহমানের বাসায় বেড়াতে গিয়েছি…..উনার ছোট ছেলে বয়স পাঁচ কি ছয় হবে ….বসে বসে টিভি দেখছে….মিসেস রহমান একটি প্রোগ্রাম দেখার জন্য ছেলের কাছে রিমোট চাইলেন …ছেলে দিল না ….তিনি সাথে সাথে বলে উঠলেন : তুমি যদি রিমোট না দেও তাহলে বিকেলে তোমার পছন্দের মোগলাই বানাবনা …..আর যায় কোথায় ! ছেলে এমন জোরে রিমোট ঢিল মারল যে রিমোটের দফা রফা!! আবার একটু পরে বাচ্চাটি বসে ভিডিও গেমস খেলছে …..ওর ছোট চাচা তের চৌদ্দ বৎসরের ….একটু খেলতে চাইতে সে পরে দিতে চাইলো….অমনি ওর চাচা বলে উঠল: আমাকে ভিডিও গেমস না দিলে আমি তোমাকে বিকেলে খেলতে নিয়ে যাবোনা ……আর যায় কোথায় !! শুরু হয়ে গেল তারস্বরে চিৎকার !! ওকে থামাতে চার- পাঁচজনের টিম গলদঘর্ম হল ।
অথচ তাকে এই কথাগুলো অন্যভাবে বললে অর্থাৎ যদি তুমি এটা দাও আমি তোমাকে অমুক জিনিস দিব,তোমাকে খেলতে নিয়ে যাব….ইত্যাদি পজিটিভ কথা বললে তাকে কনভিন্স করা যেমন সহজ হতো তেমনি সৃষ্ট বৈরী পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হতে হতোনা ।
পজিটিভ কথা , আশা জাগানো কথা সহজেই একজন মানুষকে যেমন উদ্দীপ্ত করতে পারে অন্যদিকে হতাশার কথা, নেগেটিভ কথা ততোটাই সহজে একজন মানুষকে ম্রিয়মাণ করে দিতে পারে ,জীবন তছনছ করে দিতে পারে ,মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিতেপারে…….।তাই চলুন কথা বলি আশার, কথা বলি ভরসার ….. ।আমাদের কারো কোন কথায় , কাজে যেন অন্য কারো জীবন নিরাশার অন্ধকারে ঢেকে না যায় সেই ব্যাপারে সচেতন হই ……। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে , আমার হতাশাব্যঞ্জক কথার জন্য যদি একটি জীবন ও আলো হতে অন্ধকারে হারিয়ে যায় তাহলে তার জন্য দায়ী থাকব আমি ……।তাই যখন যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন ! একটা মানুষ যতই অন্ধকারের পথ ধরে হাটুক না কেন ! চলুন তাকে শুনাই আশার বাণী …..যেকোনো মানুষের ছোট ছোট প্রচেষ্টাকে জানাই অভ্যর্থনা…..সকলের মনে জ্বালাই আশার উজ্জ্বল দিয়া…….যেন একেকটি মানুষ হয়ে উঠতে পারে একেকটি বাতিঘর ।।

Visits: 1

  • সামাজিক
Comments (০)
Add Comment
  • সংখ্যালঘু

    মন্তব্যে কি লিখবো, বুঝতে পারছি না। খুব চমৎকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

    • অতিথি পাখি

      ধন্যবাদ।

  • মাহফুজ বিন নোমানী

    লেখাটা উৎসাহমূলক হয়েছে।কিন্তু কুরআন-হাদীসের রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুরার নাম ও হাদীসের সূত্র উল্লেখ করে দিলে বুঝা সহজ হয়।

    • অতিথি পাখি

      রেফারেন্স গুলো অত্যন্ত কমন তাই দেয়া হয়নি…তবে ভবিষ্যতে এদিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে….গঠনমূলক সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ..।