বন্ধুত্ব

ক্যাম্পাস লাইফে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বলতে তেমন কিছুই ছিলোনা।মোটামুটি সাবজেক্টভিত্তিক একক হলে থাকায় ক্লাসের কারো সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারিনি। কয়েকজনের সাথে কিছুটা অন্তরঙ্গতা রয়েছে।তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন হলে থাকে।আমি আবার ব্যস্ত মানুষ (!) থাকায় ঐসব বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি,আড্ডা মারা,একত্রে মুভি দেখার সুযোগ পাইনি।ফলে তাদের সাথে কাজের বাহিরে খুব একটা সম্পর্ক ছিলোনা।

হলে ইয়ারমেটদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে।মাত্রাতিরিক্ত কিছুই নয়।কারো রুমে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা মারা ও মুভি দেখা,এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে পারিনি। রুমমেটসহ আশেপাশের কয়েকজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বেশী।সময় পেলে পাঁচ-দশ মিনিট খুনসুটি,হাসাহাসি করি।কিন্তু পারস্পরিক কাজ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক গভীর হয়নি।

ক্লাসে কারো সাথে খারাপ সম্পর্ক নেই,এজন্য পড়াশুনাকেন্দ্রীক সহযোগিতাগুলো যে কারো কাছ থেকেই পেয়ে যাই।আর ভালো ছাত্র না হওয়ায় কারো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলামনা।সুতরাং সবাইই কিছুটা সহযোগিতা করতো।

গত বছরের শেষদিক থেকে হাসিব নামে ক্লাসের এক ছেলের সাথে সম্পর্কটা বৃদ্ধি পায়।পরীক্ষাকেন্দ্রীক ব্যস্ততা অনেক বেশী থাকায় তার দ্বারস্ত হতে হয়েছিলো।এসাইনমেন্টের কাজ করা,টিউটোরিয়াল পরীক্ষার নোট জোগাড় করা ও ফটোকপি করা,এগুলোর মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।সে মাঝে মাঝে এদিকে আসলে আমার রুমে এসে আড্ডা দিতো।অথবা আমি মাঝে মাঝে তার হলে গিয়ে একত্রে নাস্তা করে কিছুক্ষণ গল্প করে চলে আসতাম।

ছেলেটা পারস্পরিক সহযোগী মনোভাবাপন্ন।সবার সাথে ভালো সম্পর্ক,আবার কিছু আচরণের কারণে অনেকে তাকে এড়িয়ে চলে।আমি এগুলো মানিয়ে নিয়েছিলাম।

একদিন সকালে তার হলে অন্য একটা কাজে গিয়েছিলাম।ঐ কাজটি শেষ করে মনে পড়লো,হাসিবের রুমে আমার একটি খাতা রয়ে গিয়েছে।তার রুমে গিয়ে দেখি,সে ল্যাপটপ দেখছে।আস্তে করে গিয়ে তার চোখ ধরে ফেললাম।সে ক্ষেপে গেলো।চোখ-মুখ লাল করে বললো-কি জন্য এসেছো? বললাম-আমার খাতাটা নেওয়ার জন্য। খাতা নিয়ে আর কোন কথা না বলে চলে আসলাম।

কয়েকদিন পরে ক্লাসের পরীক্ষায় হঠাৎ ওকে একটা ডাক দেওয়ায় ক্ষেপে উঠলো।তারপর ওকে অনেকদিনই তাকে আর কোন বিষয়ে নক করিনি।

ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো।এইকেন্দ্রীক ব্যস্ততার জন্য তার হলে খুব একটা যাইনি,আর ফোনও দেইনি। সেদিন পরীক্ষার হলে ঢুকার পূর্বে সে বলতেছে-তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছো নাকি?এখন আর আগের মত কথা বলোনা,ফোনও দাওনা?

বললাম-সুযোগ পাচ্ছি কোথায়?ফাইনালের দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত। সে হঠাৎ বললো-দেখো!আমি তোমার সাথে কিছু খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। বললাম-সেগুলোতে কিছু মনে করিনি।কিন্তু তুমি যদি সবার সাথে এরকম আচরণ করো,তাহলে তোমার পাশে কেউ থাকবেনা। সে বললো-আমি মাঝে মাঝে হঠাৎ এমন হয়ে যাই।অস্বাভাবিক আচরণ করে বসি। শুধু বললাম-তোমাকে এই আচরণ কাটিয়ে উঠতে হবে।কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা,কটু কথা বলা,হঠাৎ ক্ষেপে উঠা,এগুলো মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।অনেকে হয়ত তোমার কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য সম্পর্ক রাখবে,কিন্তু বিপদের সময়ে কাউকেই পাবানা। সে বললো-এটা করতে হবে।দেখি,চেষ্টা করে সফল হতো পারি কিনা!

এর পরে এখন পর্যন্ত ক্ষেপে উঠেনি।আমি বন্ধুত্বের দাবী খুব কমই টিকিয়ে রাখতে পারি।কারো সাথে সামান্য খারাপ ব্যবহার না হলেও ব্যস্ততার কারণে বন্ধুত্বের দাবীগুলো মিটাতে পারিনা। যার ফলে,অন্তরঙ্গ সম্পর্কগুলো খুব বেশী গড়ে উঠেনা।যাদের সাথে গভীর সম্পর্ক,তারাই ফোন দিয়ে দাওয়াত খেয়ে সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখে।

এদের সাথে মাসে কোন কথা না হলেও হঠাৎ ফোন দিয়ে বলবে-তোমার না খাওয়ানোর কথা ছিলো? -কবে?(আলাভোলা সেজে) -সেদিন না বলছিলা? -তাই নাকি?তো কবে খাবা? -তুমি যখন আসতে বলবা,তখনই আসবো।

দেখা যায়,পরেরদিন কিছুক্ষণ গল্পগুজব,খুনসুটি করে একত্রে খেয়ে-দেয়ে যার যার পথে চলে যাই। আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক এমনই……খুনসুটির সম্পর্কগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করি।

Visits: 0

  • হ-য-ব-র-ল
Comments (০)
Add Comment
  • সংখ্যালঘু

    আমাদের সমাজে এরূপ কিছু উদ্ভট মানসিক সমস্যাওয়ালা মানুষ আছে, যারা নিজেরাও জানে না- তাদের এরূপ আচরণ অন্যকে কিরূপে কষ্ট দেয়!

    • মাহফুজ বিন নোমানী

      খুব কম মানুষই তার নিজেকে চিনতে পারে।এই চিনতে না পারাটা মানুষের সমস্যা নয়,এটা মানুষের বৈশিষ্ট্য।