অনুমান করা পাপ নয় !!

দি আপনার সে বিষয়ে জ্ঞান থাকে...

0 ৭৮

ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি ভবিষ্যৎবাণী করা হারাম, অনুমান করা ঠিক নয়, ধারণা করা উচিত নয় ইত্যাদি, এগুলো কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করিনা, আমি এমন কথা মানিনা!

বিস্তারিত বলার আগে চলুন অন্য রকমের কিছু বিষয়ে একটু গল্প করে আসি…

বিদ্যালয়ে আমাদের বন্ধুদের নিয়মিত গপের আসর বসতো, একেবারে ডাহা গপ্ যাকে বলে! একদিন বন্ধু বিপুল (আব্দুল মান্নান চেয়ারম্যানের ছেলে) বললো- বিজ্ঞানীরা মাটির চেহারা দেইখা কইতে পারে এই মাটির নিচে স্বর্ণের খনি আছে কিনা!
কথাটা আমার মনে দাগ কেটেছিল!

সোনার খনি
সোনার খনি

প্রায় দুই যুগ পর আজ আমিও বলছি, হ্যাঁ বিজ্ঞানীরা অবশ্যই বলতে পারে। তারা কোন এলাকার মাটি “দেখে” অনুমান করতে পারে তার নিচে কোন খনিজ পদার্থ বা স্বর্ণ আছে কিনা। তাদের এই ‘দেখার’ পিছনে বহুদিনের অধ্যবসায়, গবেষণা, মাটির রাসায়নিক বিশ্লেষণ, আকরিকের উপস্থিতি, খনি বিদ্যার হিসাব ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকে। তাই তারা মাটির নমুনা পরীক্ষা করে এবং ভূগর্ভে প্রেরিত ও ফিরে পাওয়া মাইক্রোওয়েভ বা ফ্রিকোয়েন্সি বিশ্লেষণ করে অনুমান করতে পারেন এখানে সোনার উপস্থিতি আছে কিনা?

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা কোন এলাকায় ফোঁটা রডোডেনড্রন (rhododendron) ফুলের উপস্থিতি দেখে বলতে পারেন- এখানে চা বাগান করা সম্ভব!

রডোডেনড্রন ফুল
রডোডেনড্রন ফুল

আপনি কখনো দেখেছেন কি বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য কোন দেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর গণসমাবেশ বা বিদেশ সফর ঝড় তুফানের কারণে বাতিল হয়েছে?  অন্তত ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে এমনটি হয়নি। কেন? মানুষের অনুমান ক্ষমতার কারণে হয়নি, মানুষের ভবিষ্যৎবাণীর কারণে হয়নি।

স্যাটেলাইট

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৫০ কিমি উপরে প্রায় ১০৩ টি আবহাওয়া সংক্রান্ত বা ম্যাটেরোলজিক্যাল স্যাটেলাইট কাজ করেছে আজ পর্যন্ত।
বিভিন্ন দেশের পাঠানো এই স্যাটেলাইট গুলোর কাজ হলো- পৃথিবীর আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করা। যেমন- কোন অঞ্চলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বাতাসের আর্দ্রতা, বাতাসের গতিবেগ, বাতাস প্রবাহের দিক, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, স্রোতের দিক, গতিবেগ, বরফের পুরুত্ব, বরফ গলার মাত্রা, বার্ষিক তাপমাত্রা, দাবানল, বায়ুদূষণের মাত্রা, মেঘের ঘনত্ব, মেঘের প্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন টর্নেডো সাইক্লোন ইত্যাদির উৎপত্তি ও এগুলোর সকল তথ্য ও ছবি সরবরাহ করাই হলো আবহাওয়া স্যাটেলাইটের কাজ।

আর আবহাওয়া বিষয়ক সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই কোন দেশের বা অঞ্চলের আবহাওয়া পূর্বাভাস বা ভবিষ্যৎবাণী করা হয়। ফলে আগামী সাত দিন বা এক মাস পরের আবহাওয়া সংক্রান্ত পূর্বাভাস জানানো এখন খুবই সাধারণ ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশ বা সফরের পূর্বে নির্ভরযোগ্য আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য নেওয়া হয়। (বাংলাদেশে মোট ৩৫ টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আছে)

আমি (মাসুদ আলম) এক সময় অনেক খেলাধুলা করতাম, পড়ালেখা ছিল নামমাত্র।  তাই আমার এক আত্মীয়া আমাকে নিয়ে গেলেন ফরাজিকান্দিতে একজন মহিলা গণকের কাছে। গণক মহিলা বললেন আমার কপালে এসএসসি পাশ নেই! তবে যদি একটা কালো খাসি ছাগল, এক কেজি সরিষার তেল ও তিনশত এক টাকা দেই তাহলে তিনি আমার একটা সদগতি করে দিবেন!
আমার আত্মীয়া রাজি হলেন। আসার সময় গণককে জিজ্ঞেস করলাম – চাচি বলেন তো, আমি কি আসলেই খাসি নিয়ে আসবো, নাকি আসবো না?
ঃ আমি কি ভাবে বলবো?
ঃ তাইলে এইটা কিভাবে বললেন, আমি কখনোই এসএসসি পাস করবো না? ভন্ডামি করেন!!
ঃ বেয়াদব…. বের হয়ে যা!!
আলহামদুলিল্লাহ্….আমার ছাত্র জীবনে ফেল বলে কোন শব্দ নেই….!

এমন সব ভবিষ্যৎবাণী বা অনুমান করা হারাম।
কিন্তু একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলতে পারেন, এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতোজন নিশ্চিত পাস করবে, কতোজন ফেল করতে পারে ইত্যাদি। কিন্তু কিভাবে?

কেননা তিনি পাঁচ বছর ধরে এই শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন, দশ বারো বার পরীক্ষা নিয়েছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন তারপর ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।  আপনি যদি বৈশ্বিক অর্থনীতি বিষয়ক খোঁজ খবর জানেন, অর্থনীতি বুঝেন তাহলে কোন বৈশ্বিক ঘটনার পর অনুমান করতে পারবেন আমাদের দেশের অর্থনীতি আগামী তিনমাস পর কেমন হতে পারে।

তাহলে এই সমস্ত বিষয় গুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, কোন বিষয়ে যদি আপনার গবেষণালব্ধ জ্ঞান থাকে, বিশ্লেষণ থাকে, পর্যবেক্ষণ থাকে তাহলে সে বিষয়ে আপনি অনুমান বা ধারণা বা ভবিষ্যৎবাণী করতে পারবেন, এটা পাপ নয়।
কিন্তু কোন বিষয়ে কোন প্রকার জ্ঞান ছাড়া নিতান্তই মনগড়া ধারণা করা অনুমান করা বা ভবিষ্যৎবাণী করা হলো “অধিক অনুমান” অর্থাৎ সামর্থের বাইরে অনুমান- এটা হারাম। যেমন গণকের গণনা, অচেনা কোন ব্যক্তিকে মন্দ আখ্যা দেওয়া, কারো আমল আখলাক না জেনে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করা, ওমুক এলাকায় ভূমিকম্প হবে, ওরা মনে হয় ঘরের ভিতরে মদ পান করতেছে…. ইত্যাদি, এগুলো মিথ্যা, এগুলো হারাম।

পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে –
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।” ৪৯ নং সূরা হুজুরাত, আয়াত নং-১২।

এ বিষয়ে একটি হাদিস দেখা যেতে পারে-

হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুল সাঃ বলেছেন, ‘তোমরা আন্দাজ-অনুমান থেকে বেঁচে থেকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (বুখারি, হাদিস নং: ২২৮৭; মুসলিম, হাদিস নং: ২৫৬৩)

এমন একটি স্পষ্ট আয়াতের পরও আমি (মাসুদ আলম) “অনুমান বা ধারণা” করার পক্ষপাতি! কিন্তু কেন?

উপরে উল্লেখিত আয়াতের প্রথম অংশের অনুমান হলো ‘ভালো’ অনুমান, এর পিছনে জ্ঞান অর্জন ও তার প্রয়োগ সম্পর্কিত। আর ‘অধিক অনুমান’ হলো মন্দ অনুমান, এর পিছনে সন্দেহ অশিক্ষা অজ্ঞতা সম্পর্কিত।
জাহেলিয়াতের যুগে কাফেরগণ এবং অনেক দূর্বল ঈমানের মুমিনগণও অজ্ঞতাবশত ‘আল্লাহ’ সমন্ধে নানান রকমের মন্দ ধারণা পোষণ করতো। তারা নবী মুহাম্মদ সাঃ কে জিজ্ঞেস করতো- আল্লাহ ঘুমান কিনা, আল্লাহ খায় কিনা, আল্লাহর স্ত্রী সন্তান আছে কিনা, আল্লাহ থাকলে আমাদের কাছে আসেন না কেন (নাউজুবিল্লাহ্)?… ইত্যাদি সব মন্দ ধারণা করতো। এর প্রেক্ষিতেই এই আয়াতটি (১ম অংশ) নাজিল করা হয়েছে।
আর সূরাটির নামকরণ হয়েছে হুজরা বা হুজুরাহ্ থেকে। হুজরা- ছোট ঘর, হুজুরাহ্- ছোট ছোট ঘরগুলো (বহুবচন)। সূরাটির চতুর্থ আয়াত থেকে সূরাটির নামকরণ “হুজুরাত” করা হয়েছে।

৪র্থ আয়াত সম্পর্কে তাফসীরকারকদের বর্ণনা হচ্ছে আয়াতটি বনী তামীম গোত্র সম্পর্কে তখন নাযিল হয়েছিল, যখন (নবম হিজরি সনে) তাদের একটি প্রতিনিধি দল নবী সাঃ এর সাথে দেখা করতে এসে নবী সাঃ স্ত্রীগণের গৃহের বাইরে থেকে তাকে ডাকাডাকি শুরু করেছিলো।
…….
সুতরাং এখন আমি বলতেই পারি অনুমান করা বা ভবিষ্যৎবাণী করা হারাম নয়! যদি আপনার সে বিষয়ে জ্ঞান থাকে। তাই বেশি বেশি করে অনুমান করুন, বেশি বেশি করে ভবিষ্যৎবাণী করুন।
ভবিষ্যৎবাণী করুন মহাকাশবিদ্যা নিয়ে, চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে, জিয়োসাইন্স, খাদ্য বিজ্ঞান কিংবা অর্থনীতি নিয়ে…. সব কিছু নিয়ে।

ধন্যবাদ
মাসুদ আলম
ইউএই

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//sheegiwo.com/4/4139233