রাম মন্দির নির্মান কাজ চলছে ৩০ বছর ধরে

0 ৭৩

সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র দুদিন আগে। অথচ রাম মন্দির নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে আজ থেকে ৩০ বছর আগে। সেই থেকে রাম মন্দির নির্মানের সব কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন শুধু দৃশ্যপটে আসবে সেই মন্দির।

রায়ের বহু আগে থেকেই রামের মন্দিরের কাঠামো গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি রাম জন্মভূমি ন্যাস।

১ লক্ষ ৭৫ হাজার ঘনফুট ঝকমকে গোলাপী বেলে পাথরে মোড়া ২১২টি স্তম্ভ, ১৩২ ফুট উঁচু গম্বুজ আর চন্দন কাঠের তৈরি ২৪টি দরজার বিশালাকায় এই মন্দিরের ওপরে বসানো থাকবে রামলালা বিরাজমানের মূর্তি।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রায় তিন দশক আগে এই মন্দিরের নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। অযোধ্যায় একটি কর্মশালায় এর কাজ জোর কদমে এগিয়ে চলেছে। ৯০ এর দশকে আর্কিটেকচার চন্দ্রাকান্ত শুরু করেন এর নকশা। তিনি এই কাজ শুরু করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিংহলের নেতৃত্বে।

তাঁর দাবি, ২০০০ কারিগর রেগুলার কাজ করে এখন আড়াই বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে পারেন। তখনকার হিসেবে ১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে এই আধুনিক অভিনব মন্দির তৈরি করতে।

অযোধ্যায় সরযূ নদীর সামনে এই মন্দির হবে বিশালাকায়। দোতলা এই মন্দিরের কাঠামো গড়ার কাজ চলছে অযোধ্যার করসেবকপুরমে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদর দফতর থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি কর্মশালায়। বিতর্কিত রাম জন্মভূমি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ওই কর্মশালাটি রয়েছে রামঘাট চৌরাস্তায়।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই মন্দিরটির দৈর্ঘ্য হবে ২৬৮ ফুট এবং প্রস্থ ১৪০ ফুট। ১২৮ ফুটের উচ্চতার এই মন্দিরের প্রথম তলা ১৮ ফুট উঁচু এবং দ্বিতীয় তলের উচ্চতা ১৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। এর প্রথম তলায় থাকবেন রামলালা বিরাজমানের মূর্তি। দ্বিতীয় তলায় রাম দরবার গড়া হবে, যেখানে রাম-লক্ষ্মণ-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হবে।

মন্দিরের কাঠামোয় সিমেন্ট-বালি, লোহার রড ব্যবহার করা হবে। শোনা যাচ্ছে, গোটা মন্দিরটাই গড়া হচ্ছে নজরকাড়া গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে। রাজস্থানের ভরতপুরের অদূরে বাঁশিপাহাড়পুর থেকে আসছে সেই গোলাপি বেলেপাথর। সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, লালকেল্লা বা বুলন্দ দরওয়াজা গড়তেও দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়ানো এই বেলেপাথরই ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রায় ২৮ বছর ধরে রাজস্থানের বাঁশিপাহাড়পুর থেকে অযোধ্যার কর্মশালায় গোলাপি বেলেপাথরগুলি আনা হচ্ছে। মির্জাপুর, আগরা, রাজস্থান, গুজরাত-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই কারিগরেরা তা প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে তা মন্দিরের কাঠামোর উপযোগী করে তুলছেন।

মন্দিরের বেশির ভাগ পাথরে খোদাই করা থাকবে ফুল, দেব-দেবীর কারুকাজ। তবে রামের মন্দির হলেও এর বহিরঙ্গের সঙ্গে নাকি বেশি মিল পাওয়া যেতে পারে গাঁধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরের। অক্ষরধাম মন্দিরের মতোই এই রামমন্দিরের নকশা তৈরি করেছেন চন্দ্রকান্ত সোমপুরা। মাত্র তিন মাসেই এই কাজ করেন ওই আর্কিটেক্ট।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা শরদ শর্মা জানিয়েছেন, মন্দিরে ছ’টা ভাগ থাকবে। অগ্রদ্বার, সিংহদ্বার, নৃত্যমণ্ডপ, রংমণ্ডপ, পরিক্রমা এবং গর্ভগৃহ। শরদ বলেন, ‘‘মন্দির তৈরি করতে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ঘনফুট পাথর ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ঘনফুট পাথর কাটা হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির কাজ চলছে।’’

মন্দিরে ২১২টি স্তম্ভ থাকবে। প্রতি তলাতেই ১০৬টা করে স্তম্ভ থাকবে বলে জানিয়েছেন শরদ। তিনি বলেন, ‘‘তিন ধরনের স্তম্ভ থাকবে। একতলার স্তম্ভগুলো সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা এবং দোতলার স্তম্ভগুলো সাড়ে ১৪ ফুট লম্বা। প্রতিটি স্তম্ভেই ১৬টা করে যক্ষ ও যক্ষ্মিণীর মূর্তি খোদাই করা থাকবে।’’

গোটা মন্দির ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি উঁচু বেদির উপর গড়ে তোলা হবে। মন্দিরের প্রথম চত্বরটি হবে ৮ ফুট উঁচু। ওই চত্বর ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে থাকবে ১০ ফুটের চওড়া পরিক্রমা মার্গ।

মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে ১৬ ফুট ৩ ইঞ্চির একটি বেদি গড়়ে তার উপরে স্থাপিত হবে রামলালা বিরাজমানের মূর্তি। মূর্তির উপরে ১৩২ ফুট উঁচু গম্বুজ থাকবে। কর্মশালার এক কর্মী শ্রীরাম জানিয়েছেন, মন্দিরের গর্ভগৃহটি আটকোণা হবে। তা ছাড়া, গোটা মন্দিরটিই গড়ে তোলা হবে নগর স্টাইল স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী।

এই মন্দিরে ২৪টি দরজা থাকবে বলে জানিয়েছেন শরদ। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রতিটি দরজাই হবে চন্দনকাঠের তৈরি। কেবল পাথর দিতে গড়া এই মন্দিরের নির্মাণে তামা ছাড়া অন্য কোনও ধাতু ব্যবহার করা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মন্দিরের বিভিন্ন অংশ তো গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে গোটা মন্দির তৈরি করতে কত সময় লাগবে? শরদ শর্মা বলেন, “এর পরেও গোটা মন্দির গড়তে দুই থেকে আড়াই বছর লাগবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পাথরগুলিকে মন্দিরস্থলে নিয়ে যেতেই অন্তত মাস ছয়েক সময় লেগে যাবে।

Visits: 27

মন্তব্য
Loading...
//sheegiwo.com/4/4139233