প্রেগনেন্সিঃ এক অদ্ভুত অবস্থা!

0 ৮৮

প্রেগনেন্ট অবস্থা থেকেই একটা মেয়ের, মা হওয়ার যাত্রা শুরু। সেই সাথে শুরু মায়ের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্বের চাপ এমনই যে, চোখের সামনে বুড়ো সন্তানের বাচ্চাকাচ্চা পর্যন্ত বড় হয়ে গেলেও; বার্ধক্যের ভারে জর্জরিত এই মা-টি সেই বুড়ো সন্তানের ব্যাপারেও টেনশন না করে বাঁচে না।
সে যাই হোক- কারো প্রেগন্যান্ট হওয়ার সংবাদ শুনলে আনন্দের সাথে অনেক করুণাও জন্মায় সেই মেয়েটির জন্য। আর আল্লাহর কাছে দুয়া করি- হে আল্লাহ! তার জন্য সহজ করে দাও! কারণ এই দীর্ঘ নয় মাসের একেকটা দিন অনেক অনেক কষ্টে কাটে। কারো অভিজ্ঞতার সাথে কারোটা যেনো মিলে না। একেক জনের একেক রকম। এই সময় জুড়ে কারো অনেক বেশি গরম লাগে, কারো বা ঠান্ডা। কারো বডি স্প্রের ঘ্রাণেই বমি আসে, তো কারো সামান্য সাবানের গন্ধও সহ্য হয় না। কারো খাবারের পানিতে গন্ধ লাগে তো কেউ দিব্যি পানি পান করে যাচ্ছে। কারো প্রথম ৩/৪ মাস পর্যন্তই যা বমি হয়, কারো আবার পুরো প্রেগন্যান্সির সময় জুড়েই বমি। খায় কি আর থাকে কি! অস্থিরতার অবস্থা না হয় নাই বা বললাম।

অপরদিকে, মানসিক অবস্থা ঠিক থাকে না। অবশ্য স্বামীর দিক থেকে সহায়তা ও সহানুভূতি পেলে কিছুটা স্বস্তি লাগে। যদিও কোনো কোনো স্বামীর মনোভাব থাকে এমন- “এটা কোনো নতুন জিনিস না, সব মেয়েরই সহ্য করা লাগে”! কেউ কেউ তো বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে যায়, কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার বেলায় গা-ছাড়া মনোভাব।

এদিকে প্রথম তিন মাস ও শেষ দেড় মাস সেক্স নিষিদ্ধ থাকায়; এই সময় অনেক স্বামীর মাথা গরম থাকে। চরিত্রহীন স্বামীর চোখ পড়ে অন্য মহিলার দিকে। অথচ এই কষ্টের মুহূর্তে যেখানে কাজ থেকে ফাঁক পেলেই স্ত্রীকে সময় দেয়া উচিত সেখানে অনেক স্বামীই স্ত্রীকে মায়ের বাসায় ফেলে রাখে (অবশ্য স্ত্রী স্বেচ্ছায় থাকলে সেটা ভিন্নকথা )। আবার কোনো কোনো স্ত্রী; স্বামী ও তার পরিবারের কাছ থেকে অবহেলার শিকার হয়েও মায়ের বাসায় থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বিশেষ করে প্রথম বাচ্চা হওয়ার সময় বউ এর সাথে যদি শ্বশুড়বাড়ির পরষ্পর বন্ধন ভালো না থাকে তাহলে প্রেগন্যান্ট বউকে কেউ খাবার সেধেও খাওয়ায় না। মনোভাব এমন- “খেলে  খাইলো, না খেলে নাহ”! অথচ, আল্লাহ চাহে তো তাদেরই বংশধর একজন আসছে।
যাই হোক- আমি মনে করি- এই সময় স্ত্রীদের মন উৎফুল্ল রাখতে স্বামীকে উচিত, সময় পেলে বিকেলে সামনে কোথাও হাঁটতে বের হওয়া কিংবা ঝাঁকি না লাগে এমন যানবাহনে চড়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। প্রেগন্যান্ট হয়েছো বলে বন্দি হয়ে থাকবে, একেবারে সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে- এমনটি উচিত নয়। এটা অমানবিক।

তবে, বের হওয়ার প্রসঙ্গ যেহেতু উঠেছে তাই বলি- অবশ্যই এই সময়ে ঘরে-বাইরে ঢিলাঢালা পোশাক পরা উচিত, যাতে বাচ্চার কষ্ট না হয় আর অন্যের চোখেও যাতে দেখতে খারাপ না লাগে। তবে, খুবই দুঃখের বিষয়- আজকাল কোনো কোনো হবু মা তাদের প্রেগন্যান্সি’র ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট করেন। আপনি প্রেগন্যান্ট হয়েছেন বলে পেট দেখিয়ে জানান দিতে হবে কিংবা গর্ব করতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। সুতরাং, সংযত হোন।
সবশেষে প্রেগন্যান্ট মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলবো- এই অবস্থা অনেক কষ্টের হলেও বুকে সাহস রাখা উচিত। সাহসটা এই যে- “আমি সচেতনতা অবলম্বন করে আল্লাহ’র এই উপহারকে হিফাজত করবো। চেষ্টা করবো নরমাল ডেলিভারির, আর সে পথে চলার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাবো, প্রচুর পানি পান করবো আর সারাদিন বসে বসে নয়, বরং হাঁটবো ও ঘরের কাজ করবো”। তাছাড়া এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালো কাজ করা, ভালো কথা বলা ও ভালো বই পড়া। আর একজন মুসলিম হিসাবে বলবো- ঠিকভাবে নামাজ পড়া আর অবশ্যই দিনের কিছুক্ষণ ক্বুরআন, হাদিস পড়া উচিত। কারণ- আপনি যাই করবেন তার প্রভাব পড়বে সন্তানের ওপর।        

Visits: 16

মন্তব্য
Loading...
//grunoaph.net/4/4139233