বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তিঃ কিছু টিপস…

0 ৯২

বর্তমানে মা’দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, মোবাইল থেকে সন্তানদের নিরাপদে রাখা। যদিও অনেক মা-রাই ঝামেলা এড়াতে, খাওয়ানোর সময়, জিদ করার সময়, কান্না করার সময় কিংবা নিজে নিশ্চিন্তে কাজ করার সময় খোদ বাচ্চার হাতে (নেট চালু রেখে হোক বা বন্ধ করে) মোবাইল দিয়ে দেন। তবে একজন সফল ও সচেতন মা হতে নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না আপনার সন্তান বোবা, বধির ও দূর্বল হোক। যেহেতু তাদেরকে তেমনইভাবে তৈরি করতে একটা মোবাইলই যথেষ্ট। তা- মোবাইলে শুধু গেমস খেলে হোক বা গ্যালারির শত শত ছবি দেখে কিংবা কার্টুন বা ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে হোক। তাই আমি মনে করি নিচের টিপসগুলো মা-বাবা উভয়ের জন্য জরুরি; যা আমার আশপাশ এবং অভিজ্ঞতা থেকে লব্ধ-

১/ প্রথমত, অভিভাবক হিসাবে আপনাকে স্থির হতে হবে যে- আপনি আপনার সন্তানকে অতিরিক্ত মোবাইল দেখা থেকে দূরে রাখবেন। তাই, জিদের সময় বা খাওয়ানোর সময় মোবাইলের অভ্যাস করবেন না। খাওয়ানোর সময় মোবাইল দিলে খাওয়া শরীরে লাগে না, কারণ মন অন্যদিকে থাকে। তার চেয়ে বরং, আপনি প্লেটে যা নিয়েছেন- তার বর্ণনা তুলে ধরুন। কি কি উপাদান আপনার প্লেটে আছে, এসব খেলে কি হবে, একেক দিন একেক উপাদানের গল্প বলুন। সহজ উদাহরণ হলো- খাবার টেবিলের সাধারণ উপাদান ‘লবণ’ নিয়ে গল্প বলুন, এটাতে কি আছে, কোথা থেকে এটা আসে, কিভাবে প্যাকিং হয়ে দোকান থেকে বাড়ি পর্যন্ত আসে। তাদের সাথে গল্প করুন। ইনশাআল্লাহ তারা আগ্রহ বোধ করবে। আর রইলো জিদের সময়কার কথা। প্রথমে

বলবো- এতো নরম হলে (অনেকে আছেন বাচ্চার কান্না সইতে পারেন না) বাচ্চা বড় তো হয়ে যাবে তবে মানুষ হবে না। মোবাইলের জন্য জিদ করলে তা যে দেয়াই লাগবে- সেটা শর্ত নয়, কান্না করুক। তাদের মনটাকে অন্য দিকে নেয়ার চেষ্টা করুন।

২/ এটা বাস্তবতা যে, আপনার সন্তানকে আপনি মোবাইল না দিলেও হয়ত অন্য কেউ যখন তখন দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অভ্যাস খারাপ হচ্ছে। তাই তার সাথে আলোচনা করুন। কি ভালো আর কি খারাপ। যাতে সে সময়ের সাথে সাথে নিজ থেকে দূরে সরে আসে। আপনি হয়ত ভাবছেন- এই টুক বাচ্চা কি বুঝে? না, এটা আমাদের ভুল। দুই-আড়াই বছরের বাচ্চাও অনেক বুঝে- যা আমাদের কল্পনার বাইরে। তাই তাদের ভাষায়, পারলে একটা কাল্পনিক চরিত্র ফিক্সড করে মোবাইলে দেখা জিনিসের অপকারিতা, সেই সাথে অনেকক্ষণ মোবাইল ব্যবহারে কান, চোখ ও ব্রেনের অপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ে তার বর্ণনা তুলে ধরুন।

৩/ বাচ্চাকে তার বয়স অনুপাতে কতগুলো বই, হরেক রকম খেলনা কিনে দিন। তবে সব বই ও খেলনা একসাথে দিবেন না। লুকিয়ে রাখুন। যখন মোবাইলের জন্য জিদ করবে তখন নতুন কোনো বই বা খেলনা দিয়ে দিবেন। যাতে মন অন্য দিকে চলে যায়।

৪/ মোবাইল না দিয়ে তাকে বিভিন্ন ধরণের কাজ দিন। কিছু এলোমেলো কাপড় দিয়ে তাকে ভাঁজ করতে বলুন, রং পেন্সিল আর কাগজ দিয়ে দিন, মজার কোনো খাবার

তাকে নিজ হাতে খেতে দিন, ঝাড়ু দিতে বলুন, তার সাথে খেলুন, তাকে নিয়ে সাইকেল চালান। অতঃপর সন্তানকে সময় দিন।

৫/ শত চেষ্টা করেও হয়ত দেখবেন- আপনি যখন মোবাইল হাতে নিচ্ছেন বা বাড়ির মধ্যে কাউকে দেখছে- গেমস/কার্টুন খেলতে তখন হয়ত সে আপনার কাছে এসে আবদার করলো। সে ক্ষেত্রে কিছু সময়ের জন্য তাকে মোবাইল দিন এবং সময়ের ব্যাপারটা তাকে বুঝিয়ে দিন। ভালো হয়, তার দেখার মতো ধর্মীয় গান, ভিডিও বা গল্প ডাউনলোড করে একটা ফোল্ডার খুলে সেটাতে রাখুন। যাতে নেট অফ রেখে তাকে মোবাইলটা দেয়া যায়। আর অবশ্যই আপনার অগোচরে সে কি দেখছে সেটাও খেয়াল রাখা অতীব জরুরি।

সবশেষে-বাচ্চাকে সময় দিতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই। খেয়াল রাখতে হবে-সে যাতে কখনো একাকী বোধ না করে। একাকী বোধ করলেও যাতে সে আপনাকে তার সঙ্গী হিসাবে পায়। কারণ একাকীত্ব থেকেও মোবাইল আসক্তি হয়ে যায়। আর এই আসক্তি খোদ সন্তানকে মা-বাবা থেকে দূরে নিয়ে যায়।

Visits: 7

মন্তব্য
Loading...
//ptaixout.net/4/4139233