নাইওরঃ গ্রামীন সংস্কৃতির বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য
আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য ও রূপের নাম নাইওর। এই নাইওর শব্দের সঙ্গে পরিচিত কম বেশি সবাই। নাইওর বলতে গ্রাম বাংলার প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে নিজ কন্যা অতিথি হয়ে আসাকে নাইওর বলে। আট- মাইয়া নাইওর, মাইসা – নাইওর, জ্যৈষ্ঠমাসে নাইওর ,এবংকি প্রথম সন্তানটি বাপের ভিটায় হবে এর জন্যও নাইওর আনা হতো অাগে। কবি সাহিত্যিকদের জীবন পড়লে জানতে পারি তারা বেশিরভাগই নানার বাড়িতে জন্মেছেন।
এই নাইওরকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেক গল্প ও কবিতাসহ বাংলা চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। রচিত হয়েছে অনেক গান। যুগে যুগে এসব গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।এ সম্পর্কে বিখ্যাত সেই ভাটিয়ালী গানটাতো অাপনারা জানেনই –
“তোরা কে যাসরে ভাটি গাং বাইয়া
আমার ভাইধনরে কইও নাইওর নিতো আইয়া……”
জলবায়ুর প্রভাবে নদী ও খাল বিল শুকিয়ে যাওয়ায় নাইওর যাত্রার চেহারা বদলে গেছে। একসময় নৌকায় করে বধূর বাপের বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়লেও এখন আর এটি নেই বললেই চলে। গরুর গাড়ি ও পালকিতে করে নাইওর যাত্রাও হারিয়ে গেছে। এসবের বদলে আধুনিক যানবাহনে বিশেষ করে ট্রেন, বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনে দেখা মেলে নাইওর যাত্রার।
কবর কবিতার দাদুর সেই নাইওর যাত্রার পর শশুর বাড়ির সেই স্মৃতিতো মনে আছে –
“বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু’পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!”
অামাদের মায়েরাও নাইওর যাইতো। মনে পড়ে অামার তখনকার কথা। মা আমাদের জন্য, পড়ালেখার জন্য নাইওর কম যেতো। তবে যাওয়ার সময় হাঁস, মুরগীগুলো খাঁচায় করে নিয়ে যেতো। আজ হঠাৎ প্রথম অালোর নাইওর নিয়ে প্রতিবেদনটি পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিলো। এই নাইওর নিয়ে হতো তখন কত অাগ্রহ মায়েদের, বোনেদের। ননদ,দেবরদের নানা মানসিক অত্যাচার থেকেও কিছুদিনের জন্য স্বস্তি পেতেও মায়েরা মুখিয়ে থাকতো। তখনকার দিনে পরিবারগুলো ছিল একান্নবর্তী পরিবার৷
আবার এটা নিয়ে চলতো কত দেন দরবার। নাইওর দেবে কি দেবেনা৷ কখন আসবে, কদিন থাকবে এই সেই।…..
তবে নাইওর তৎকালীন ছেলেমেয়েদের জন্য ছিল আর্শিবাদস্বরুপ। নানার বাড়িতে মজা আর মজা। অনহ সেই দিনগুলো….. মিস করি খুব খুব খুব।
বন্ধুদের মাঝে কারো সেই স্মৃতি থাকলে শেয়ার করতে পারেন কমেন্টে।
Visits: 14