বৃদ্ধাশ্রম

0 ১১১

ইংল্যান্ডের একটি চিকিৎসা সাময়িকী অনেক আগে একটি শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা করেছে। নিচে তা তুলে ধরলাম :
মেরী নামের একটি মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তার মা তাকে খুব ভাল পাত্রের কাছে বিবাহ দিল। স্বামী অত্যন্ত প্রতাপশালী ও সামাজিক ছিল। তার ঘরে একটি কন্যা সন্তানও জন্ম নিল। মায়ের আর কোন সন্তান না থাকায় সে মেয়ের সাথেই থাকত এবং নাতনীর লালন পালনে সহযোগিতা করত। নাতনী যখন একটু বড় হল এবং নিজের পোষাক পরিচ্ছদ নিজেই পাল্টাতে সক্ষম হলো তখন মেরী ভাবল যে, মায়ের উপস্থিতিতে ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এজন্য বৃদ্ধাকে এখান থেকে সরাতে হবে। মা বৃদ্ধা ভাতা পেতেন। এজন্য তাকে বৃদ্ধাদের বিশেষ ঘর ওল্ড হাউসে প্রবেশ করিয়ে দিল।
মা মেয়েকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা তদবীর করল এবং ঘরে তার প্রয়োজনীয়তার কথাও স্মরণ করিয়ে দিল। কিন্তু মেরী মাকে বলল যে, আমাদের চার কামরার ফ্ল্যাট এখন আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। এখন আম্মা তুমি এখান থেকে চলে গেলেই ভালো হয়। মেরীর কন্যা এলিজাবেথের নানীর সঙ্গে বেশ ভাব জমে গিয়েছিল। তার আবেদনও নাকচ হয়ে গেল। অবশ্য মায়ের সাথে ওয়াদা হল যে, প্রতি রবিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তাকে বাসায় আনবে।
মাকে ওল্ড হাউস পৌছানোর পর সাক্ষাতে দেরী হতে লাগল। সপ্তাহে রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় ঘরে মেহমান আসা-যাওয়া করে। তাদের উপস্থিতিতে ঘরে একজন দুর্বল বৃদ্ধার আগমন ভালো দেখায় না, বিধায় আম্মাজানের ওল্ড হাউসেই বসবাস সুনির্ধারিত হয়ে গেল। এদিকে মা কিছু অক্ষম ও দুর্বল বৃদ্ধাদের মাঝে থেকেও তাদের স্মরণ করত। ভালোবাসা ও মমতাপূর্ণ বড় বড় চিঠি প্রেরণ করত। নাতনী এলিজাবেথের কাছে স্নেহ-মায়া ও ভালোবাসা পাঠাত। কিন্তু সে চিঠির উত্তরের অপেক্ষাতেই থাকত। কন্যা তার মাকে চিঠিতে লিখল যে, বড়দিনের উৎসবে অবশ্যই মাকে ঘরে আনতে যাবে। মা বেচারী পকেট খরচ থেকে এক পয়সা এক পয়সা করে বাচিয়ে ঊল ক্রয় করল এবং দিবারাত্র খেটে-খুটে প্রিয় নাতনীর জন্য টুপি মাফলার এবং সোয়েটার তৈরি করতে লাগল। বড়দিন আসতে আর মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকী। এদিকে বুনন কাজ কিছু বাকী রয়ে গেছে।
তাই ২৪শে ডিসেম্বর কঠিন বরফ পাত হওয়া সত্ত্বেও বিল্ডিংয়ের বেলকুনিতে চেয়ার পেতে কলিজার টুকরা প্রিয় নাতনীর হাদিয়ার কাজ সম্পন্ন করতে লাগল। কঠিন শীতে বেলকুনিতে বসার কারণ এও ছিল যে, যখন তাকে নেয়ার জন্য ট্যাক্সি আসবে, তখন তাদেরকে যেন অপেক্ষা করতে না হয়।
ওল্ড হাউসের ন্যান্সী নামক খাদেমটি তাঁর খেদমতের ব্য্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ছিল। সে বৃদ্ধাকে হিটার রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করল; কিন্তু তিনি পরিবারের লোকজনদের দেখার জন্য অধীর হয়ে ছিলেন। তাই কোন ক্রমেই সেখান থেকে অন্যত্র যেতে রাজি হলেন না। ন্যান্সী একটি কম্বল এনে তাঁর গায়ে জড়িয়ে দিল। বার বার ঘরে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর সাথে সাথে চাও দিতে লাগল। এভাবে সকাল হয়ে গেল, কিন্তু তাকে নেয়ার জন্য কেউই আসল না। দুর্বলতা, রাত্রি জাগন এবং হিমেল হাওয়ায় সারারাত বসে থাকার কারণে তার নিউমোনিয়া হয়ে গেল। মেয়ে নিজে আসার সুযোগ পেলনা, এমনকি একবার ফোন করেও মায়ের খবর নিতে পারল না। ইতিমধ্যে মা মারা গেল। মেরী সংবাদ পেয়ে মায়ের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করল। কিছুদিন পর মেরী মায়ের জিনিসপত্র আনার জন্য ওল্ড হাউসে গেল। তখন সে সেখানকার খাদেমা ন্যান্সীর কৃতজ্ঞতা আদায় করল। কারণ সে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মায়ের খেদমত করেছে। এরপর মনে মনে ভাবল যে, ন্যান্সী বাস্তবিকই একজন খেদমতগার মেয়ে। তাকে বাসায় খেদমতের জন্য নিয়ে গেলে মন্দ হয়না।
তাই সে ভালো বেতনের লোভ দেখিয়ে ন্যান্সীকে তার সাথে বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিল। ন্যান্সী হেসে হেসে বলল, “আমি আপনার বাড়িতে অবশ্যই যাব। তবে তার আগে সৃষ্টিকর্তার ইনসাফ দেখে নেব। যেদিন আপনার মেয়ে এলিজাবেথ আপনাকে ওল্ড হাউসে রেখে যাবে, সেদিন আমি তার সাথে খেদমতের জন্য চলে যাব। ”
এটি শুধু একটি ঘটনাই নয়, বরং এটা বাস্তব সত্য………………..। আমাদের বর্তমান যুগে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কি নিজেদের বিবেককে একটু জাগ্রত করতে পারিনা। আমরা কি পারিনা.. মানবিক দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে.. ??? নিজেদের দায়িত্ব অনুধাবণ করতে..?? -কালেক্টেড

Visits: 7

মন্তব্য
Loading...