অভ্র কি একুশে পদকের যোগ্য নয়?

0 ৯৩

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রানোচ্ছল, আড্ডাবাজ এক তরুণ মেহদী হাসান খান হঠাৎ করে উনি হয়ে গেলেন একদম চুপচাপ। মাথা নিচু করে হাঁটা, কেউ কিছু বললে তার সাথে কথা বলা। মেহদী ভাইয়ের চরিত্রের সাথে যায় না, অন্তত যারা উনার সাথে আড্ডা দিতেন তাদের জন্য অবশ্যই।

মেহদী হাসান খান
মেহদী হাসান খান

এর মাঝে জানা গেলো বাংলা লেখার জন্য উনার নিজের বানানো একটা সফটওয়্যার আছে। বিজয় থাকতে কেনো আরেকটা সফটওয়্যার লাগবে তা আমাদের অজানা। পরে জানা গেলো ইংরেজি অক্ষর চেপে কীবোর্ড এ বাংলা লেখা যায় এবং একদম বিনামূল্যে। এই হচ্ছে মেহদী হাসান ভাইয়ের বানানো সফটওয়্যার এর বৈশিষ্ট্য।

দুর্ধর্ষ ১৮ বছর বয়েসটাকে দরজার ওপাশে আটকে, হোস্টেলের একটা রুমে নিজের পৃথিবী বেঁধে ফেলেন মেহদী ভাই, তখন গোটা পৃথিবীর জন্য বাংলা ভাষাকে উন্মুক্ত করে দেয়ার যুদ্ধে নেমে গেছেন। ঐসময় মাথার চুলটুকু বাড়তে থাকে, থুতনির নীচে ফিনফিনে দাঁড়ি গজাচ্ছে, চোখের নীচে কালিটুকু হয়ে যাচ্ছে স্থায়ী। এর মাঝে আছে মেডিকেল নামের রোড রোলার। তাবৎ বিজ্ঞ শিক্ষকেরা ঘোষনা দিয়ে জানিয়ে দিলেন, উনি মেডিকেলের অনুপযোগী। বিজ্ঞ শিক্ষকেরা বলে দিলেন, সময় থাকতে মেডিকেল ছেড়ে দিতে।
মেডিকেলের অসহ্য, দমবন্ধকরা পৃথিবী মেহদী ভাইকে চেপে ধরছিলো আষ্টেপৃষ্ঠে, মরে যাওয়ার কথা উনার। একদিকে নতুন আইডিয়া, উনার স্বপ্ন, আরেকদিকে মেডিকেল, অসম্ভব অস্থিরতা।

মেহদী ভাই আটকাননি কোথাও। সৃষ্টি সুখের উল্লাস আর পাশে ছিলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ আর উনার মাবাবা। মেডিকেলটাও শেষ করেছেন সন্মানের সাথেই।

মেহদী ভাই লেগে থেকে এই গোটা বাংলাকে যেটা দিয়েছেন, তা হচ্ছে মুক্তি, বাংলা লেখার স্বাধীনতা। তাই মেহদী ভাইর স্লোগান,

“ভাষা হোক উন্মুক্ত”

উন্মুক্ত এই সফটওয়্যার বাঁচিয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। সরকারী দপ্তরগুলোতে অভ্র ব্যবহার হয়। নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে আমার আপনার পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, সরকারী ফাইলে লেখা হচ্ছে। সব কিছুর মূলে ছিল মেহদী হাসান ভাইর সেই এক রুমের পৃথিবী, একটা ছোট্ট কম্পিউটার আর পর্বতসম স্বপ্ন। স্বপ্নের নাম “অভ্র”।

কেউ কেউ বাকি সবার সব অর্জন কেড়ে নিয়ে বাকিদের দাবিয়ে “আমি আমি আমি আমি আমি” করতে করতে লাইমলাইটের সব আলো আকড়ে অর্জনের আলোয় উদ্ভাসিত হয়, আর কেউ কেউ অর্জনের বিশাল ঝুলি চুপচাপ পেছনে ফেলে আসে নিঃশব্দে! কেউ কেউ পরোক্ষভাবে বাংলা ভাষার কপিরাইট চায় মনোপলি বিজনেসম্যানের মত, মেরে দেওয়া, কেড়ে নেওয়া আইডিয়া নিয়ে দরকষাকষি করে আরও কিছু ধান্ধার লোভে, আবার কেউ কেউ নীরবে নিঃশব্দে ইতিহাস পাল্টে দেয় বিন্দুমাত্র খ্যাতি বা ফেইমের পরোয়া না করেই। প্রচারবিমুখ, পর্দার অন্তরালে থাকতে ভালোবাসেন মেহদী হাসান ভাই। এই যে আজ অনলাইনে অভ্র কি-বোর্ড ব্যবহার করে এত অসংখ্য মানুষ স্বাধীন উদ্যমে লিখছেন, অসাধারণ সব লেখা সমৃদ্ধ করছে বাঙলা ভাষাকে, কিন্তু অভ্র’র আবিষ্কর্তা মেহদী ভাইকে ক’জন চেনেন, জানেন তাঁর সম্পর্কে, জানে তাঁর কীর্তি সম্পর্কে, সন্দেহ আছে। উনি কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর মতো, চুপচাপ, মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে।

অভ্র আমাকে, আপনাকেও বাংলায় লেখার স্বাধীনতা দিয়েছে। এই স্বাধীনতা দেয়ার জন্য মেহদী ভাইর কিছু স্বীকৃতি প্রাপ্য। প্রাপ্য সরকারের কাছেও। তীব্র প্রচারবিমুখ আর বিনয়ী ভাইয়ের স্বপ্নটাকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার কি দেয়া যায় না?

একুশে পদক অভ্র এর পাওনা কারণ ভাষার জন্য উনি কাজ করেছেন।

তথ্যঃ ইন্টারনেট থেকে নেয়া ও কর্তিত এবং সংযোজিত করা।
[  Shahidur Rahman – ফেসবুক অবলম্বনে]

Visits: 8

মন্তব্য
Loading...
//eecmauks.net/4/4139233