ভালবাসার কড়চা

0 ৮২

বয়সের সাথে ক্রমাগত লুকোচুরি খেলতে খেলতে যখন শৈশবে তখনও বুঝিনি ততটা,যতটা বুঝেছিলাম কৈশোরে।হয়তো শৈশবটা বড় অবুঝ ছিল,তাই বুঝতে পারেনি প্রতিটি মানুষই লতার মত অন্য কাউকে আঁকড়ে বেঁচে থাকে।তখন একটা মানুষকে দেখতাম,যিনি আঁতিপাঁতি করে তাঁর অবলম্বন খুঁজে যেতেন…বয়সের ভারে সাত বছর শয্যাগত হয়ে পড়ে থাকা মানুষটার ঘর্মাক্ত মুখ আমি আম্মাকে মুছে দিতে দেখতাম রোজ।নড়াচড়া করার শক্তি হারিয়ে মানুষটা কেমন অসহায়ের মত ছটফট করতো,একটু গল্প করার জন্য কেমন আকুল হয়ে ডাকতে থাকতো…আর হতভাগা আমি তাঁর ডাক না শোনার ছল করে ঘরের দাওয়া থেকে চুপিসারে খেলতে বেরিয়ে যেতাম।তখন সেটা অনুভব না করলেও এখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা কিছুতেই।

আমার আক্ষেপ শুনে কেউ
কেউ বলতে পারেন,পাঁচ ছয় বছর বয়সী বাচ্চার এটা কোনো অপরাধ ছিলোনা!
কিজানি,কিসে অপরাধ আর কিসে অপরাধ নেই!!
আজকাল ওসব ভাবতে গিয়ে পাঁজরের হাঁড়ে ব্যথা বাড়ে শুধু…
আমার প্রথম দেখা লতানো মানুষ ছিলেন দাদীজান!
তারপর এখন আরেকজনকে দেখছি,তিনি দাদীজানের ছেলে।আমার আব্বুজী।এই মানুষটাকে আমার কলিজার সাথে গুলিয়ে ফেলি আমি…।কলিজাই বটে…পঁচাশি বছরের এই লোকটা আমার কতখানি,সেটা না ই বলি!
এই লতানো মানুষটাকে চারপাশের মানুষগাছগুলোকে জড়িয়ে লতিয়ে ওঠতে দেখছি।দেখছি,আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে তার আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা।
আমাকে তিনি গাছ মনে করেন!
কিন্তু ইদানীং আমি নিজেকে একটি নুইয়ে পড়া লতা হিসেবে আবিষ্কার করছি।আর সেই সময়টাতেই কিছু মানুষগাছ আমাকে হাত বাড়িয়ে দেয় বেড়ে ওঠার জন্য। তাদের বাড়ানো হাত ধরে আমি ফের সোজা হতে চেষ্টা করি। দিনশেষে অবনত মস্তিষ্কে স্বীকার করি নগন্য আমার প্রতি প্রেমময়ের দয়াটুকু না থাকলে আমি মাটির সাথে মিশে যেতাম..
মিশে যেতাম ধূলিকণার সাথে।আর তাই আমার চোখ ভিজে যায়…আমার কন্ঠস্বর বুজে আসে,আমি শব্দ হারিয়ে ফেলি।

আমি বিশ্বাস করি,ভালবাসা মাপার কোন যন্ত্র নেই।ভালবাসার প্রতিদান কেবলই ভালবাসা…এর কোন প্রতিশব্দ হয়না আর!
আমি রাত বিরেতে মানুষগাছের ভালবাসায় আপ্লুত হই,স্বার্থপরের মত তাকে লতিয়েই বাড়তে থাকি।আর চোখ মুখ বন্ধ করে দুহাত তুলে চাইতে থাকি,”একদিন আমাকেও গাছ বানিয়ে দিবেন তো আপনি?আমিও যে গাছ হতে চাই প্রভু!”

Visits: 1

মন্তব্য
Loading...
//owhaptih.net/4/4139233