এদের জন্যই সমাজ ভালো আছে

0 ৬৭

১.

হলের এক ইমিডিয়েট বড় ভাই জব পাওয়ার পর হলে আসা অনেকটাই কমিয়ে দিলেন।উনার ব্যবহৃত সাইকেলটি হলে বেকার হয়ে ছিলো।

আমার রুমমেট সাইকেলের বেকার অবস্হা দেখে ভাবছিলো,সাইকেলটি বেকার পড়ে আছে।বড় ভাইকে বলে আমরা সাইকেলটি ব্যবহার করতে পারি।

কিছুদিন পরে বড় ভাই হলে ফিরলে রুমমেট বড় ভাইকে এই আবেদন জানানোর পর ভাই একবাক্যে সাড়া দিয়ে দিলেন।রুমমেটও খুশীমনে সাইকেল নিয়ে ফিরে এলো।

ক্যাম্পাসে প্রচুর হাটতে হয় বিধায় সাইকেলের চাহিদা অনেক।আর বড় ভাইয়ের সাইকেল দিয়ে রুমমেট দিব্যি রাজার হালে চলে যাচ্ছিলো।

বড় ভাই সপ্তাহে একদিন হলে আসতেন বিধায় সাইকেল উনার খুব একটা লাগতোনা।একদিন হঠাৎ এসে রুমমেটকে বলছেন-আরিফ,তুমি কি খুব ব্যস্ত?

-না ভাই।

-তুমি কি কোথাও যাবা?

-না।

-তুমি বাহিরে না গেলে আমাকে সাইকেলটি আমাকে একটু দিবা।

বড়ভাই সাইকেল নিয়ে গেলেন।আমি রুমে ফিরলে রুমমেট হাসতে হাসতে বড়ভাইয়ের ঘটনা বলছে।’’বড় ভাইয়ের সাইকেল উনি নিজেই খুজতে লজ্জা পান।

আমি বললাম-এই বড় ভাই আছে বলেই সমাজটা এখনো কিঞ্চিৎ ভালো আছে।যেখানে কেউ সামান্য জিনিস অন্যকে দিতে চায়না,সেখানে বড় ভাই উনার সাইকেল তোকে দিয়ে বসে আছে।

 

২.

বাঁধন অফিসের সামনে দাড়িয়ে সিনিয়র-জুনিয়ররা মিলে আড্ডা দিচ্ছি।এককজনের একেক মন্তব্য,কারো হাসি প্রত্যেকের অন্তর ছুয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ এক বড় ভাই এসে আড্ডাতে যোগ দিলেন।উনি খুব মিশুক প্রকৃতির।সবার সাথে খুব দ্রুত মিশে যান এবং প্রচন্ড আড্ডাবাজ।

জুনিয়রদেরকে রক্ত দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করে শেষে বলছেন-যদি কারো ইমার্জেন্সী বি পজেটিভ রক্ত লাগে,তাহলে আমাকে জানাইয়ো।আমি বেশীরভাগ সময় দুই-আড়াই মাসের মাথায় রক্ত দেই।

 

৩.

শহীদ সালাম বরকত হলের সামনে দুপুরের খাবার খাচ্ছি।খাওয়ার মাঝেই এক চাচী এসে সাহায্য চাচ্ছেন।আমি আমার সামর্থ্যমত কিঞ্চিৎ সাহায্য করলেন।

এক বড় ভাই জিজ্ঞেস করলেন-চাচী,দুপুরে খেয়েছেন?

-না।

দোকানদারকে ডাক দিয়ে ভাইটি বললেন,চাচীকে খাবার দেন তো।চাচী যেটা চায়,সেটাই দিবেন।

চাচীকে জিজ্ঞেস করার পর চাচী মাছ দিয়ে খেতে রাজী হলেন।এদিকে বড় ভাই উনার খাবার খেয়ে চলেছেন।একটু পর চাচীর দিকে তাকিয়ে দেখেন,চাচী একটু খেয়ে আর খাচ্ছেন না।শুধু খাবারে হাত নাড়ছেন।

বড় ভাই একটু চিন্তা করে চাচীকে জিজ্ঞেস করলেন-চাচী,বাড়ীতে কেউ আছে?

-উনি বাড়ীতে আছেন।অসুস্হ।

ভাই দোকানদারকে ডাক দিয়ে চাচীর খাবারসহ আরো কিছু খাবার প্যাক করে দিতে বললেন।প্যাক শেষে খাবার চাচীর হাতে ধরিয়ে দিতে বললেন।

ভাবতে লাগলাম,যেখানে ৫/১০ টাকা দিয়ে দুস্হদের জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলি,সেখানে আরো অল্প কিছু টাকা যোগ করে দুস্হদের কষ্টটা অনেক লাঘব করা যায়।কিন্তু বড় ভাইয়ের এই কাজটি দেখার পূর্বে কোনদিনও এই চিন্তাটি মাথায় আসেনি।

 

৪.

সমাজ নিয়ে এখন আর হতাশ নই।সমাজে যেমন খারাপ আছে,ভালো মানুষের সংখ্যাও একেবারে কম নেই।যদি সমাজে এই ভালো মানুষগুলো না থাকতো,তাহলে অসহায় ও দরিদ্র মানুষগুলোর দুনিয়াতে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে যেতো।

এসব বড় ভাইয়েরা হয়ত কাউকে দেখানোর জন্য অথবা কারো কাছ থেকে কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য এসব কোন কাজই করছেননা।স্রেফ মানসিক প্রশান্তির জন্য ও ভালো লাগে বিধায় মানুষের জন্য এই কাজগুলো করছেন।

ইনারা এসব কাজ কাউকে না দেখালেও পরোক্ষভাবেই এই কাজগুলোই মানুষের মাঝে ভালো প্রভাব ফেলছে।আর এর দ্বারাই সমাজের মানুষগুলো পারস্পরিক সামাজিকতা সম্পর্কে বেশী সচেতন হচ্ছে।

Visits: 3

মন্তব্য
Loading...
//vasteeds.net/4/4139233