সামাজিক প্রলেপায়ন…

0 ৮১

এক. অজয় দেবগনের Singham Returns মুভিটা দেখেছেন নিশ্চয়? তিন চারটে ছেলে রাতে বাড়ি ফেরার পথে বয়স্ক এক পুলিশকে ডিষ্টার্ব করত। তো একদিন পুলিশ ওদের ধরল। বিভিন্নজন বিভিন্ন শাস্তির কথা বলতে লাগল। এক পুলিশ বলল জেলে নিয়ে যেতে। এই মুহুর্তে সিনিয়র অফিসার (অজয়) বলল, জেলখানার নয়, এই দেশের তোমাদেরকে দরকার। এই কথা বলে, সাথে তাদের সাবধান করে দিয়ে, ছেড়ে দেয়া হয়।

.
দুই. Singham মুভির এক দৃশ্যে দেখা যায়, কুখ্যাত স্মাগলারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করায় সৎ পুলিশ ইন্সপেক্টার রাকেশ কদমকে স্মাগলিং কেসে ফাঁসানো হয়েছে। মিডিয়া তার নামে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে। সেই খবর টিভিতে দেখে তার পিচ্চি বাচ্চাটাও বাবার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। এই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে সে আত্মহত্যা করে। এক্ষেত্রে, মানুষের তাকে “স্মাগলিং এর সাথে জড়িত” মনে করে নেয়াটাই লেবেলিং; মোর স্পেসিফিক্যালি, নেগেটিভ লেবেলিং।
.
যখন আপনার কোন কাজকে জেনে বা না জেনে অন্যরা নিজেদের মত করে সংজ্ঞায়িত করে, সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে Labeling Theory বলা হয়।

.
ধরুন, কিছু মানুষ মিলে একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন, যার উদ্দেশ্য ধর্মান্ধতা দূর করা। তো, খুব স্বাভাবিকভাবেই, আমজনতার ধর্মান্ধতা যে শ্রেনীর পুঁজি বা ইনকাম সোর্স, তারা এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেই। ওই গোষ্ঠী প্রচার করতে শুরু করলেন, এই সংগঠন ধর্মবিরোধী। তাই এদের বয়কট করা উচিত, ইত্যাদি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে, এই প্রচারণাটাই উপরে বর্ণিত লেবেলিং।
.
সহজ একটা উদাহরন দেই। আমি ঢাবি’র বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র। অপেক্ষাকৃত নতুন বিভাগ। নাম শুনার সাথে সাথেই, কিছু না জেনে, অনেককে দেখেছি আমার বিভাগকে হেয়জ্ঞান করতে। তাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত। এই হেয়জ্ঞান করাটাকেই নেগেটিভ লেবেলিং বা প্রলেপায়ন বলা যায়।
.
আরো একটি মজার উদাহরন দেয়ার আছে। আমার এক পিচ্চি খালোমনি ঢাবি’র ফিশারিজ বিভাগের ছাত্রী। তো, ওনার বিল্ডিঙয়ের এক সাবেক ঢাবিয়ান ওনার আপুকে জিজ্ঞ্যেস করলেন তিনি(সেই পিচ্চি খালোমনি) কোথায় পড়েন। খালোমনি(মানে ওর বড়বোন) বললেন ফিশারিজ বিভাগে। “কি! ফিশারিজ! এই নামে ঢাবিতে কোন বিভাগ আছে! নিশ্চয় আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। হেন তেন”, খানিকটা এরকম তাচ্ছিল্যভরা ছিল ওনার রিপ্লাইটা। আন্ট বললেন, আপনি না শুনার মত অতটা নতুনতো নয় বিভাগটা। পরে ওই এক্স-ঢাবিয়ান কাকে যেন জিজ্ঞ্যেস করে নিশ্চিত হলেন ওই বিভাগের অস্থিত্ব সম্পর্কে, এবং বলাই বাহুল্য, খুব লজ্জাও পেলেন। এক্ষেত্রেও, ওই এক্স-ঢাবিয়ানের প্রতিক্রিয়াটাকেও ব্রড সেন্সে নেগেটিভ লেবেলিং বলা যায়।
.
উপরোল্লিখিত দ্বিতীয় দৃশ্যে কদমের উপরে যে নেগেটিভ লেবেলিং করা হয়, তার ফল ছিল আত্মহত্যায় তার মৃত্যু। বাস্তবেও, এই লেবেলিং এর কারনে কত কিছুর যে মৃত্যু হয় তার ইয়ত্তা নেই। প্রথমত, যিনি প্রলেপায়ন করেন, তার প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও স্বভাবসুলব ভালবাসাটা মরে যায়। সংস্কারের উদ্দেশ্যে কেউ কাজ শুরু করলে তার ইচ্ছেটা থমকে যায় খানিকটা। অনেক স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।
.
অন্যদিকে, প্রথম দৃশ্যে ঐ ছেলেগুলোকে জেলে নিয়ে গেলে তাদের গায়ে “জেল খাটা আসামি” তকমা বা প্রলেপ লেগে যেত, যা সারা জীবন ধরে তাকে বয়ে বেড়াতে হত।

.
বর্তমান বাংলাদেশের জঘন্যতম সমস্যা হল এই লেবেলিং। প্রতি পদে পদে আমাদের ভিক্টিম হতে হয় এই লেবেলিং এর। বুহতান বা মিথ্যে অপবাদের যে ধারনা ইসলামে আছে, তার সাথে মিল আছে এই থিওরির। সামাজিকভাবে এই প্র্যাক্টিসের মূলোৎপাটন সময়ের দাবি। নইলে সম্পৃতি ও ভালবাসার যে বীজ মানব জীবনে স্বহজাত, সময়ের সাথে সাথে এই ইন্সটিঙ্কট হারিয়ে যাবে।
.
এমনটি হোক তা কখনোই আমাদের কাম্য নয়।

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//owhaptih.net/4/4139233