সবই তো সদকায়ে জারিয়াহ

0 ১১২

১.
তিন-চার মাস অন্তর অন্তর ঢাকা থেকে বাড়ীতে আসা হয়।কয়েকমাস পূর্বে রাত ৮.০০ টার দিকে বাড়ীর দিকে যাচ্ছি।বাড়ীর সন্নিকটে আসার পর দেখি,একটি জমিতে দিনের মত আলো।পুরো জমিটিকে লাইট দিয়ে স্টেডিয়ামে রুপান্তর করা হয়েছে।
একজনকে জিজ্ঞেস করলাম-তোমরা রাতের বেলা লাইট জ্বালিয়ে ক্রিকেট খেলছো যে!
বললো-টুর্ণামেন্ট ছাড়া হয়েছে।এই মাঠ ছাড়া আর কোন মাঠে খেলার সুযোগ নেই।

জমিটা আমাদের।মেজো ভাইকে হাসতে হাসতে ছেলেদের সুকীর্তির ঘটনা বললাম।উনিও বললেন-ছেলেরা খেলুক।ওরা এখন আর খেলাধুলার জায়গা পায়না।আমাদের ওখানেই খেলাধুলা চালিয়ে যাক।
এইবার বাড়িতে আসার পর দেখি,আমাদের ঐ জমিতে অন্যরা চাষ করছে।পরেরদিন সমবয়সী এক ছেলে বলছে-তোমরা ঐ জমিতে তাদেরকে চাষ করতে দিছো কেন?ঐ জমিতে তারা যা লাগাইছে,তার কিছুই হয় নাই।আমরা কত সুন্দর সেখানে খেলতাম!
বললাম-আমরা কেউ বাড়িতে থাকিনা।অন্য কেউ হয়ত তাদেরকে চাষ করতে বলছে।

২.
আমাদের বাড়িটা এখন আর আমাদের নেই।পুরোটাই পাড়ার লোকজনের হয়ে গেছে।বাড়িতে যা কিছু উৎপাদিত হয়,তার বেশীরভাগই প্রতিবেশীদের কাছে চলে যায়।
নিয়মিতই দেখি,পিচ্চি পিচ্চি ছেলেরা কামরাঙ্গা,লিচু,পেয়ারা গাছগুলোকে তাদের খেলার আস্তানা বানিয়ে নিয়েছে।একেকটা গাছে দলবেঁধে উঠে।যা যা পেড়ে নেয়া যায়,তার সবই পেড়ে নেয়।
একসময় ধমক দিতাম।এখন আর ধমক দেইনা।দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাই।আর এরাও বুঝে ফেলেছে,উনি আমাদেরকে কিছু বলবেননা।
যদিও আমার অন্য ভাইদের ওরা যমের মত ভয় পায়।
গতকাল এক পিচ্চিকে বললাম-জলপাই গাছে উঠোনা কেন?
পিচ্চি বলে-গাছে জলপই নাই।জলপই থাকলে গাছে উঠলাম হইলে….
বাড়িতে ফিরে আম্মুকে বলি-পিচ্চিরা এই এই কাজ করছে।
আম্মু বলে-এদেরকে কিছু বলেও লাভ নেই।এরা সবসময়ই এমন করে।
বললাম-সদকায়ে জারিয়াহ চলতে থাকুক। 🙂

৩.
আশে পাশের বেশীর পুকুর নষ্ট ও পানি কমে গিয়েছে।আমাদের পুকুরটা বেশ ভালো রয়েছে।এটি ছেলেদের সাতার কাটার আশ্রয়স্হলে পরিণত হয়েছে।
আব্বু বাড়িতে থাকলে অনেক সময় ধমক দেন।মাঝে মাঝে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দেন,ছেলেদেরকে দ্রুত সাতার শেষ করে চলে যাবার জন্য।
আব্বুকে মাঝে মাঝে বলি-এলাকাতে ছেলেদের খেলার জায়গা,সাতার কাটার জায়গা সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।এরা আমাদের এখানে যতটুকু করতে পারে,ততটুকুই করুক।

সবগুলোই সদকায়ে জারিয়াহ…….
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষরোপণ করবে অথবা শস্য বপন করবে উহা মানুষ অথবা পাখি অথবা পশু খাবে,নিশ্চয়ই উহা তার জন্য দান হিসেবে গণ্য হবে’ । (বুখারি ও মুসলিম)

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//zuhempih.com/4/4139233