বাংলাদেশে ভারতের সুবিধাসমূহ

0 ৭৬

ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ অনেক উন্মুক্ত, অনেক উদার।
বাংলাদেশে ভারতের পণ্য, বিনিয়োগ, শ্রম, পরিষেবা, প্রতিষ্ঠান আসায় কোনো বাধা নেই।
বাংলাদেশে ভারতের বহুসংখ্যক টিভি চ্যানেল দেখতে কোনো বাধা নেই।
কিন্তু ভারতে বাংলাদেশের পণ্য থেকে শুরু করে টিভি চ্যানেল পর্যন্ত সবকিছুতেই নানাবিধ বাধা আছে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে আমরা অবিরাম ভারতে উৎপাদিত পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের বাজার সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেল ভারতে কার্যত নিষিদ্ধ থাকায় এখানকার পণ্যের খবর ভারতে যায় না।

সর্বশেষ হিসাবে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈধ বাণিজ্য ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। এর শতকরা মাত্র ৮ ভাগ বাংলাদেশ রফতানি করতে পারে, বাকিটা আমদানি। অশুল্ক বাধাই বাংলাদেশের পণ্য আটকে দেয়।

নৌপথে ভারত ট্রানজিট সুবিধা অনেক আগে থেকেই পাচ্ছে, এখন পেতে যাচ্ছে সড়ক ও রেলপথে; কিন্তু এখন পর্যন্ত নেপাল বা ভুটানে যাওয়ার জন্য ভারতের ৩০-৪০ কিমি. ব্যবহার শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ। বহু আগে সম্মতিপত্র দিলেও ভারতের কারণেই কাজের সূচনা হতে পারেনি।

ভারতের জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যে ধরনের ‘ট্রানজিট’ প্রস্তুতি চলছে, তার কোনো তুল্য দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নেই। একমাত্র কাছাকাছি হল দক্ষিণ আফ্রিকা দিয়ে চারদিকে ঘেরাও হয়ে থাকা লেসোথো। কিন্তু এটিও তুলনীয় নয়; কারণ, সোনার খনি নিয়েও লেসোথো রাষ্ট্র হিসেবে প্রায় ভেঙে পড়েছে, আয়ুসীমা ৩৪ বছর, মারিজুয়ানা চাষের ওপর নির্ভর অনেক কর্মসংস্থান, আর লেসোথোর মানুষ নিজেরাই দক্ষিণ আফ্রিকার দশম প্রদেশ হওয়ার আবেদন করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও এর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না দুটি কারণে। প্রথমত, দেশগুলোর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এতটা অসমতা নেই, যেটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আছে। দ্বিতীয়ত, সেখানে কোনো দেশই অন্য দেশের ভূমি বা নৌপথ ব্যবহার করে নিজ দেশেরই অন্য প্রান্তে যায় না, যায় তৃতীয় কোনো দেশে।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে অবাধ যোগাযোগ ভারতের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সবদিক থেকেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ যদি ভারতকে এ সুবিধা দেয় তাহলে ভারতের পরিবহন ব্যয় কমে যাবে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি, অর্থাৎ আগে যে পণ্য পরিবহনে খরচ হতো ১০০ টাকা তার খরচ দাঁড়াবে ৩০ টাকারও কম। এছাড়া সময় লাগবে আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ, বা চার ভাগের এক ভাগ। এ সময় ও অর্থ সাশ্রয় বহুগুণে তাদের অর্থনেতিক সম্পদ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাজে লাগবে। ভারতের এত লাভ যেখানে, বাংলাদেশের সেখানে প্রাপ্তি কী? আমাদের সার্ভিস ও অবকাঠামোর সুযোগ ব্যয় কত? কী কী লাভ, আর কী কী ক্ষতি বা সমস্যা? কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি?
যে রাজ্যগুলোয় ভারত পণ্য নিয়ে যাবে, সেসব রাজ্য এতদিন ছিল বাংলাদেশের বহু শিল্পপণ্যের বাজার। সেই বাজার সংকুচিত হয়ে যাবে, সম্ভাবনা বিনষ্ট হবে। তার ক্ষতি কত?
বাংলাদেশের নিজের পণ্য পরিবহন ভবিষ্যতে অনেক বাড়বে। এখনই বিভিন্ন রাস্তায় জটের কারণে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়, পচনশীল দ্রব্য বিনষ্ট হয়, দ্রব্যমূল্য বাড়ে। ভারতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে আমাদের পণ্যপ্রবাহে কী রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে?

ভারতের কাছ থেকে কঠোর শর্তযুক্ত ঋণ নেয়ার চুক্তি হয়েছে তাদেরই কাক্সিক্ষত পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা দাঁড় করার জন্য। এ রকম শর্তযুক্ত ঋণের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কমই আছে, যেখানে সবকিছু ভারত থেকে কিনতে হবে, সব সিদ্ধান্ত তাদের। বাংলাদেশের দায়িত্ব শুধু তাদের নির্দেশমতো কাজ করা এবং সময়মতো সুদসমেত ঋণের টাকা ফেরত দেয়া। এ ঋণকেই বিশাল অর্জন বলেন অর্থমন্ত্রী।

কাঁটাতার দেয়া সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এখনও বন্ধ হয়নি।নিহত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারত রাষ্ট্রের অভিযোগ, তারা সন্ত্রাসী কিংবা চোরাচালানি। দেশের মধ্যে র‌্যাবের হাতে যারাই খুন হয় তারা যেমন সন্ত্রাসী হয়ে যায়, সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তেমনি। ১২ বছরের বালিকারও নিষ্কৃতি নেই এ অপবাদ থেকে। আর চোরাচালান কি এ গরিব মানুষেরাই করে? তাতে শুধু কি বাংলাদেশের লোকজনই জড়িত থাকে? সীমান্তে কখনও ভারতীয় নিহত হয় না; কিন্তু নিয়মিতভাবে নিহত ও জখম হয় বাংলাদেশের কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের গরিব মানুষ।

…………………আনু মুহাম্মদ

Visits: 3

মন্তব্য
Loading...
//waufooke.com/4/4139233