সমাজ সংস্কারে সঠিক আকীদার গুরুত্ব!!!

0 ৮৪

আকীদা মানব প্রকৃতির স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তার দেহ-মন ও অস্তিত্বের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বিষয়টি সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। কেননা মানুষ যখন থেকে বুঝতে শেখে, তখন থেকেই সে কোনো না কোনো বিশ্বাসের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। জীবনের অনেক কিছুই তার কাছে এমনভাবে প্রতিভাত হয় যে, তা থেকে সে নিজেকে কোনোক্রমেই বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। এসব কিছুর যথার্থতা যাই থাকুক না কেন, প্রথমে তা ব্যক্তি মানসে এবং পরে তার প্রাত্যহিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, বরং তার পুরো জীবনটাই বিন্যস্ত হয় আকীদা-বিশ্বাসের আলোকে।

মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব হওয়ায় তার ব্যক্তি জীবনের প্রভাব সমাজ জীবনে পুরোপুরি প্রতিবিম্বিত হয়ে যায়। এভাবে ব্যক্তির আকীদা এক সময় সমাজের আকীদায় পরিণত হয়।

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন আকীদার সমাহার ঘটলে সমাজকেও এসকল আকীদায় বিভক্ত হতে দেখা যায়।

একটি মুসলিম প্রধান সমাজে সহীহ ইসলামী আকীদাই হল সমাজের বৃহত্তর শ্রেণীর আকীদা। সহীহ আকীদা থেকে বিচ্যুতি, নৈতিক অবক্ষয়, নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, স্বার্থপরতা ও লুটে পুটে খাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি আরো বহুবিধ কারণে একটি উত্তম সমাজ অশান্ত, অস্থির, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে পরিণত হয়। সে সমাজকে আবার সুন্দর ও সুশীল সমাজে উন্নীত করার জন্য প্রয়োজন হয় সংস্কার কাজের।

সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও সে ক্ষেত্রে সঠিক ইসলামী আকীদার ভূমিকা ও গুরুত্ব:
মানুষ তার ব্যক্তি জীবনের সকল চাহিদা মেটানোর জন্যই সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে। যে কোনো সমাজ গঠনের প্রধান লক্ষ্যই হল সে সমাজের সকল সভ্যের সার্বিক কল্যাণ সাধন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতকরণ। কিন্তু ব্যক্তি জীবনের অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও স্বার্থপরতা সমাজ জীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সমাজকে দুর্নীতি, বৈষম্য, বিভক্তি, হানাহানি প্রভৃতি ব্যাধিতে কলুষিত ও বিষাক্ত করে তোলে। তখনই দেখা দেয় সমাজ সংস্কারের বিরাট প্রয়োজনীয়তা, যেমনটি আমরা অনুভব করছি আমাদের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে।

সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি সমস্যা জর্জরিত দুর্নীতিগ্রস্ত ঘুণে ধরা এ সমাজের মানুষের মধ্যে সঠিক আকীদার জ্ঞান নেই বললেই চলে। এরই অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে আকীদায় অনৈক্য এবং প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী যার যেমন ইচ্ছা তেমন আকীদা পোষণ, কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক এর যথার্থতা থাকুক বা নাই থাকুক। অন্যদিকে মানুষের ঈমান হয়ে পড়েছে অত্যন্ত দুর্বল, অন্তর থেকে তাকওয়ার বিদায় ঘটেছে, পরকালীন শাস্তির কথা সে বিস্মৃত হয়েছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা, লুটে-পুটে খাওয়ার প্রবণতা, নানা প্রকার সন্ত্রাস ও অপসংস্কৃতির বিস্তার ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতে আমরা দেখি তিনি তৎকালীন জাহেলী সমাজকে বদলে দিয়ে একে পরিণত করেছিলেন তখনকার সর্বোৎকৃষ্ট সমাজে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনের যে আন্দোলন তিনি শুরু করেছিলেন নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে, তার প্রাথমিক প্রক্রিয়াই ছিল আকীদাগত সংস্কার।

দুর্নীতি, রাহাজানি, যুলুম-নির্যাতনমুক্ত সুশীল সমাজ গঠনে সঠিক আকীদা এমন একটি মজবুত ভিত তৈরী করে যার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সমাজের সকল কাজ-কর্ম, পারস্পরিক লেন-দেন। অতএব আকীদা যদি হয় বিকৃত বিভ্রান্ত ও মিথ্যার উপর স্থাপিত, তাহলে সামাজিক জীবন হয়ে পড়বে বিপন্ন, বিপর্যস্ত ও ধ্বংসের মুখোমুখী। আজ আমাদের সমাজ যে অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার কারণ মূলত এটাই। সুতরাং সমাজকে বিকৃতি, বিপর্যয় ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সঠিক আকীদার দিকেই ফিরে আসতে হবে।

অপসংস্কৃতি রোধে সঠিক আকীদার গুরুত্ব:

বিজাতীয় ভিনদেশী ও ভিন্ন ধর্মের অনুকরণে আমাদের বাংলাদেশী সমাজে সংস্কৃতির নামে বর্তমানে যে সব কিছুর চর্চা হচ্ছে, তাকে অপসংস্কৃতি নামে অভিহিত করলে বোধকরি কোনো অত্যুক্তি হবে না। কেননা এসব সংস্কৃতি যেমনি আমাদের দেশীয় চিন্তা-চেতনা ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে না, তেমনি তা মুসলিম আকীদার সাথে বহুলাংশেই সাংঘর্ষিক। স্মরণ রাখতে হবে আমাদের এ দেশটি মুসলিম প্রধান দেশ। তাই যদি আমরা আমাদের সকল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানকে সঠিক ইসলামী আকীদার আলোকে বিন্যস্ত করি, তাহলেই দেশ উপহার পেতে পারে একটি সুন্দর, রুচিশীল, শালীন ও সুস্থ-সংস্কৃতি।

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

 

 

Visits: 0

মন্তব্য
Loading...
//dolatiaschan.com/4/4139233