শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা

0 ৯৫

বর্তমান শতকে মানবজাতির সামগ্রিক জীবনে যে বিষয়টির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো নৈতিকতার যথাযথ প্রয়োগ। নৈতিকতার যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই সামাজিক এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পথ প্রসারিত হয়। সামাজিক, সাংস্কৃতিক-তমুদ্দনিক সকল পর্যায়ে শিষ্টাচারমূলক মার্জিত আচরণ সবার কাম্য। মানবজীবনের প্রতিটি বাঁকে অজস্র বাধা-বিপত্তির মোকাবেলায় নৈতিকশক্তির বিকল্প অন্য কিছু আজও উপলব্ধি করা যায়নি। মানুষের প্রতিটি আচার-ব্যবহার, চাল-চলন তার ভেতরকার মনুষ্য রূপের প্রতিচ্ছবিকে প্রকাশ করে। স্বল্প পরিসরে মনে হলেও নৈতিকতার ব্যাপক প্রভাব মানবজাতির পুরো জীবনসমুদ্রে তরঙ্গাকৃতিতে বহমান।

নৈতিকতা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের ব্যবহারিক জীবনে প্রতিফলিত হয়। নৈতিকতা নামক এই গুণটি এমনিতেই সৃষ্টি হয় না, এটি অর্জন করতে হয় এবং এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবে মানুষের চিন্তা-চেতনা, আর্দশিক মূল্যবোধ এবং সৃজনশীল কর্মতৎপরতা বিকশিত হয়। একটি জাতির কাংখিত উন্নয়নের জন্য, কাংখিত নৈতিকমানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। নৈতিকতা অর্জনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা আমাদের শিক্ষানীতিতে না থাকার কারণেই আমাদের এই বিপুল সম্ভাবনার দেশটি দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমাদের দেশে সংঘটিত বেশির ভাগ অপরাধই নৈতিকতাবিবর্জিত মানুষদের দ্বারা হয়ে থাকে। অথচ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়নে ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নৈতিকতাসম্পন্ন, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেম এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা।’ শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় তথা নৈতিক ও যুগোপযুগী আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

মূলত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর অনুগত হওয়াই নৈতিকতার ভিত্তিস্তম্ভ। আর নৈতিকতার প্রধান উৎস হলো মানবতার মুক্তির সনদ আল কুরআন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ। নৈতিকতার গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন বলছে, ‘‘আসলে তোমাদের বা আর কারো কোনো বিশেষ মর্যাদা নেই। বরং সত্য কথা এই যে, যেই নিজের সত্তাকে আল্লাহর অনুগত করে দেবে এবং বাস্তবে সৎ হয়ে চলবে, তার জন্য তার রবের নিকট বদলা রয়েছে, তাদের কোনো ভয় বা দুঃখ নেই।’’ (সূরা বাকারা : ১১২)

সুতরাং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে যদি আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে নিজের সামগ্রিক জীবনকে পরিচালনার তাকিদ পাওয়া যায় তবেই নৈতিকমানে নিজেকে উন্নীত করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেখানে নৈতিক এবং পার্থিব শিক্ষার কার্যকরী সংযোগ থাকবে। আমরা যাই শিখি না কেন তা যেন নৈতিক শিক্ষায় ভরপুর থাকে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ববহ কথা বলেছেন জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান। তিনি বলেছেন, ‘ফিজিক্সই পড়ি, কেমেস্ট্রিই পড়ি অথবা সাহিত্য পড়ি যা কিছুই পড়ি না কেন নৈতিক (ধর্মের) আদর্শের দ্বারা তা যেন পরিশোধিত হয়।’ নৈতিকতাহীন পাশ্চাত্য দুনিয়াপূজারী সভ্যতার দিকে তাকালে নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। কতটুকু নৈতিক অধঃপতনের ফলে বছরের পর বছর ধরে আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়ার মতো দেশে নির্বিচারে হাজারো নর-নারী এবং শিশু হত্যা করা হচ্ছে। তাই অধ্যাপক বার্বাস তার ” The Philosophy of the Modern Education “গ্রন্থে বলেছেন, ‘বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অনুশীলন না করলে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কারণ মানুষ ধ্বংসের উপকরণ অনেক বেশি জোগাড় করে ফেলেছে।’

Visits: 1

মন্তব্য
Loading...
//whulsaux.com/4/4139233