দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ…
কথায় আছে- “দশে মিলে করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ”। কোনো এক উদ্দেশ্যে সবাই একসাথে কাজ করলে- জয় কিংবা পরাজয়, অবশেষে যে ফলাফলই আসুক-সেটা মেনে নিতে লজ্জা বা আফসোস লাগে না। আর এই কথাটা আমাদের জীবনের অনেক পর্যায় ও পদক্ষেপের সাথে জড়িত। হোক সেটা সকল বন্ধুরা মিলে কোনো কাজে নামলে কিংবা হোক পারিবারিক কাজ।
তবে মূলভাব বিশ্লেষণ করার আগে বলতে হয়- প্রত্যেক মানুষের, ক্ষেত্র বিশেষে যোগ্যতা বিচারে, কখনোবা লিঙ্গভেদে বিভিন্ন দায়িত্ব থাকে। ফলে সেই মানুষটাকে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়- যেমন অফিসে কিংবা কোনো সংগঠনে। তবে, একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন- নিজেদের একান্ত কিছু দায়িত্ব থাকা ছাড়াও মানুষ সামাজিক জীব বিধায় সবার সাথে তথা পরিবারে থাকে বলে কিছু কাজ নিজের না হলেও করতে হয়। এটা অনেকটা মানবতা ও সহানুভূতির কারণে। কারণ- পরিবারটা হয় সবার, থাকে সবাই। সেক্ষেত্রে “এটা কি আমার কাজ”?- এটা বলার যুক্তি থাকে না। একটা উদাহরণ দিলে হয়ত বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
এক পরিচিতা, নাম-কানিজ। সে পারিবারিক দায়িত্বে বেশ সচেতন। তবে তার পরিবারের কিছু সদস্য বেশ উদ্ভট ও অবিবেচক মানসিকতার। হুট করে পরিবারে নতুন নিয়ম জারি করে দেয় বটে- তবে সেটা করবে কে, তার কোনো নির্দেশনা থাকে না। অবশেষে দেখা যায়- কাজের ভারটা পরোক্ষভাবে কানিজের ওপর চলে আসে। যেটা তাকে অনেক পীড়া দেয়, যেকারণে পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার মনে এখন বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে।
কখপোকথনে তার পরিবারের অনেক অব্যবস্থাপনার কথাই উঠে আসে, যার ছোট একটা উদাহরণ দেই। সম্প্রতি বাড়ির কর্তা সিস্টেম করেছে ফ্ল্যাটের উপরের গেট তো লাগানো থাকেই এবার নিচের মেইনগেটও লাগানো থাকবে। কিন্তু বার বার উপর থেকে নিচে গিয়ে গেট খুলবে কে- সেটার ব্যাপারে কর্তা চুপ! নিচে কোনো দারোয়ান বা বাসায় কাজের মেয়ে নাই- যে সে যাবে। আর কাজের মেয়ে হোক বা ঘরের কেউ- বার বার সিড়ি বেয়ে ওপর-নিচ করার কাজটা আসলেই কষ্টকর। কিন্তু এ কাজটাও দেখা গেছে কানিজের ওপর এসে পড়ে। সে নিজ থেকে সহজে কাউকে অর্ডার দেয় না। কিন্তু কখনো তার ছোট ভাইকে যদি গেট খুলে আসতে বলে, তখন রাগের ভঙ্গিমায় চেঁচিয়ে উঠে- “এটা কি আমার কাজ”? অথচ এই কাজটা একান্ত কারোই না- বরং সবার। অতঃপর দেখা যায়- কেউ আসলে, হাতে কাজ থাকা স্বত্তেও, এমনকি থালা-বাসন ধোয়ার সাবান হাতে থাকলেও- উঠে গিয়ে তাকেই খোলা লাগে। তাই আফসোস করে বলে- “পরিবারের অনেক কাজই মিলেমিশে করা লাগে, তবে সবার মধ্যে আন্তরিকতা না থাকলে- থাকাই যায় না…”।
সুতরাং বলতেই হয়- কোনো কাজ সম্পাদনে অনিচ্ছাকৃত যখন একার ওপর চাপ পড়ে যায় কিংবা কেউ হটকারিতা স্বরূপ নেতিবাচক কথা শোনায়, তখন সেই কাজে জিতে যাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না, বরং কারো বিতৃষ্ণা বা অসন্তুষ্টির দ্বরূণ পুরো ব্যবস্থাপনাই বিগড়ে যেতে পারে।
Visits: 22