আইরিশদের দুর্ভিক্ষে উসমানী খিলাফাহ ও বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব মানবতা!

0 ৩৭৪

আয়ারল্যান্ডে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের খবর (১৮৪৫-৫২) পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। তখন উসমানী খলীফা ছিলেন আবদুল মজীদ। রহমদীল খলীফার মন কেঁদে উঠলো। তিনি স্থির করলেন এই আর্ত মানুষগুলোর জন্যে কিছু করবেন।

প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার স্টার্লিং পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। বর্তমানে যার মূল প্রায় ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। রানী ভিক্টোরিয়া খলীফার অভিপ্রায়ের কথা জানতে পেরে হুকুম জারি করলেন: ”খলীফা চাইলে শুধু এক হাজার স্টারলিং পাঠাতে পারবেন। এর বেশি নয়”।

রানীর এ ঘোষণা দেয়ার কারণ হলো, রানী নিজে পাঠিয়েছিলেন মাত্র দুই হাজার স্টারলিং। উপরে থাকতে চাওয়া আরকি। না হলে মানইজ্জত সব যে যায় যায়!

খলীফা প্রকাশ্যে রানীর কথা মেনে নিলেন। কিন্তু গোপনে খাবার ভর্তি তিনটা বড় বড় জাহাজ পাঠলেন। বিৃটিশ কর্তৃপক্ষ জাহাজগুলোকে ডাবলিন এবং বেলফাস্টে নোঙ্গর ফেলতে দিল না। জাহাজের ক্যাপ্টেন জোরাজুরিতে না গিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিলেন। তিনি ফেরার পথে, সবার অগোচরে ড্রগোডা বন্দরে নোঙ্গর ফেললেন। শহরের মেয়রের সাথে যোগাযোগ করে, খাবার-রসদ দুর্ভিক্ষ উপদ্রুত অঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।

এভাবে বিৃটিশ কর্তৃপক্ষকে বাঁচিয়ে ড্রগোডা বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে উসমানী নৌ বহরকে ৬ হাজার মাইল পাড়ি দিতে হয়েছিল। কোন বিনিময় ছাড়াই মুসলিম নাবিকগন এই ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। খলীফা (রহ.) ও উদারভাবে খ্রিস্টানদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন।

আয়ারল্যান্ডবাসীও খলীফার এই মহানুভবতার কথা ভুলে যায় নি। দেশের সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তির স্বাক্ষর করা একটা কৃতজ্ঞতাপত্রও তারা খলীফার সমীপে পেশ করে ছিল। সেই কৃতজ্ঞতাপত্র এখনো উসমানী জাদুঘরে সযত্নে রক্ষিত আছে। তারা লিখেছিল:

”আমরা আপনার ঋণ কোনও দিন শোধ করতে পারব না। আমাদের জ্ঞাতি ভাইয়েরাই আমাদেরকে মেরে ফেলার বন্দোবস্ত করেছিল। আপনিই এমন অস্তিত্বের সংকট মুহূর্তে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ।

প্রচন্ড শীতে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, পেটে দেয়ার মতো এক টুকরা আলু ছিল না। শরীর গরম করার মতো আচ্ছাদন ছিল না। আপনি সত্যিই মহান। আপনি সত্যিই পূজনীয়। আপনি আমাদের সেইন্টদের চেয়েও অনেক অনেক বড়। । অনেক অনেক উুঁচতে। আমাদের পুরো আইরিশ জাতির হৃদয় চিরকালের জন্যে আপনার অতিমানবিক অচিন্ত্যনীয়, অভূতপূর্ব মহত্ত্বের কাছে বন্দী হয়ে রইল।

আপনি আমাদেরকে, আমাদের এই ধুঁকে ধুঁকে মরতে বসা, অসহার নিরন্ন মানুষগুলো মুঝে লোকমা তুলে খাইয়ে দিয়েছেন, ঈশ্বর আপনাকেও সেভাবে খাইয়ে দিন”।

পাদ্রী হেনরি ক্রিমস। তিনি ১৮৫৩ সালে একটা বইয়ে লিখেছিলেন: ”মহান তুর্কি খলীফা শত বাধা সত্ত্বেও, আইরিশদের পাশে দাঁড়িয়ে যে আকাশসম উদারতার পরিচয় দিয়েছেন, তার তুলনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল”।

এই ঘটনার ১৬০ বছর পর, আয়াল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ম্যারি ম্যাক এলিস তুরস্ক সফরে এসেছিলেন ২০১০ সালে। তিনি অত্যন্ত ভক্তিভরে খলীফা আব্দুল মজীদ (রহ.) কে স্মরণ করেছেন। ছলছল চোখে সে সময়কার তুকি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলকে বলেছিলেন:

”আমরা আইরিশরা, আপনাদের এই অবদানকে কখনো ভুলিনি। চিরদিন ভুলবো না। আমরা আপনাদের এই ফিরিশতাতুল্য খলীফাকে কোনওদিন ভুলে যাইনি। ভুলতে পারিনি। তিনি না থাকলে আজ আমি আপনার সামনে বসে থাকতে পারতাম না। আমার আইরিশ জাতির অস্তিত্ব থাকতো না”।

১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রগোডা শহরের মেয়র গডফ্রে অত্যন্ত কৃতজ্ঞচিত্তে খলিফা আব্দুল মজিদ (রহ.)-কে স্মরণ করেন। তার সাহায্য এবং অনুপম মানবতাবোধের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং উসমানি খিলাফাহর প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেন।

ড্রগেডা শহরের বিখ্যাত ক্লাব ‘ড্রগোডা ফুটবল ক্লাব’ এর লোগোতেও ওসমানীয় খেলাফতের প্রতি সম্মান জানিয়ে হেলাল-সেতারাকে লোগো হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া ড্রগোডা কোর্ট অফ আর্মসের লোগোতেও অংকিত আছে উসমানি খিলাফাহর গৌরবময় ইতিহাস।

Visits: 2

মন্তব্য
Loading...
//ptaupsom.com/4/4139233