প্রতিযোগিতাঃ সুস্থ বনাম অসুস্থ

0 ৬১

প্রতিযোগিতা করা ভাল কিন্তু সেটা যদি হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাহলে তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতেই বাধ্য ।আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমি এটিকে খারাপ বৈ ভাল কিছুতেই বলতে পারছি না ।

পর্যবেক্ষণ-১ঃ

ছোট খাট ছিমছাম একটি মফস্বল শহর।সেই শহরের কিছুটা দূরে একটু গ্রাম সাইডে একটি হাই স্কুলে ভর্তি হয় রাইমা।রাইমা পড়াশোনায় খুব ভাল তাই ক্লাস সিক্সে ভর্তির পর থেকেই প্রতিটি ক্লাসে সে প্রথম হতে থাকে ।শুধু পড়াশোনায়ই না আচার ব্যবহারেও সে অত্যন্ত নম্র এবং ভদ্র।ফলে শিক্ষকদের কাছেও সে খুবই প্রিয় পাত্রীতে পরিণত হয় ।রাইমার সাথে একই ক্লাসে রিপন নামে একটি ছেলেও ভর্তি হয় । সেও পড়াশোনায় খুব ভাল। কিন্তু রাইমার সাথে ঠিক এঁটে উঠতে পারে না। সে আপ্রাণ চেষ্টা করে সাথে সাথে তার বড় দুই বোন ও তাকে সারাক্ষণ পড়াতে থাকে যেন তাদের ভাই পরীক্ষায় ফাস্ট হতে পারে ।কিন্তু ক্লাস সিক্সের ফাইনাল পরীক্ষার পরে রেজাল্ট বের হলে যথারীতি রাইমাই প্রথম হয়।এতে রিপনের বোনেরা রিপনকে অনেক মারধর করে এবংসে ছেলে হয়ে কি করে একটি মেয়ের সাথে পারল না ইত্যাদি বিভিন্ন কথা বলে তাকে অপমান করতে থাকে । রিপন যেহেতু সোজা পথে আপ্রাণ চেষ্টা করেও রাইমার সাথে পারল না এবার সে উল্টা পথ ধরার চিন্তা করতে থাকে।সে শুনেছিল একই এলাকার স্কুলগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র হুবহু মিলে যায় তাই সে মনে মনে সে সব প্রশ্ন যোগাড় করার প্ল্যান করে।প্ল্যান মতো সে স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ১ম সাময়িক পরীক্ষার পূর্বেই এক সেট প্রশ্ন জোগাড় করে ফেলে এবং সেই প্রশ্ন অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে থাকে ।রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় রিপন ফাস্ট হয়েছে।এভাবেই চলতে থাকে। রিপন প্রশ্ন দেখে পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী দ্বিতীয় সাময়িক ও ফাইনাল পরীক্ষায়ও বরাবরের মতো ফাস্ট হয়।এই প্রথম রাইমা ফাস্ট পজিশন থেকে সেকেন্ড পজিশনে চলে যায় ।রিপন এখন ক্লাস এইটের ফাস্ট বয়।

পরিণতিঃ এইটুকু পর্যন্ত সবকিছুই খুব ভাল ছিল কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ক্লাস এইটের বৃত্তির রেজাল্টের পর।দেখা যায় রাইমা টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে কিন্তু রিপনের নাম গেজেটের কোথাও নেই।

পর্যবেক্ষণ-২ঃ

জনাব কামাল গ্রামে বাস করেন ।পৈতৃকসূত্রে তিনি অনেক জমিজমার মালিক হলেও পরবর্তিকালে সেগুলো তিনি আর ধরে রাখতে পারেননি।সকল জমিজমা বিক্রি করে একসময় তিনি প্রায় ভূমিহীনে পরিণত হন।জনাব কামালের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।বড় ছেলেটি পড়াশোনায় খুব ভাল।সে নিজের চেষ্টাতে পড়াশোনা করে বেশ ভাল একটি চাকরিও পেয়ে যায় ।এবার ছেলেকে বিয়ে দেবার পালা।যেহেতু ছেলে শিক্ষিত এবং মোটামুটি ভাল চাকরি করে সেহেতু শহরের ভাল ভাল পরিবারের মেয়েদের সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে ।এক সময় জনাব কামালের বড় ছেলে শহুরে এক ধনীর মেয়েকে বিয়ে করে ।মেয়েদের পরিবার তাদের চেয়ে অর্থ সম্পদের দিক দিয়ে অনেক উপরে।কিন্তু জনাব কামাল মেয়ের পরিবারকে পিছনে ফেলে নিজের পরিবারকে কিভাবে তাদের চোখে অনেক বেশি ধনী হিসাবে উপস্থাপন করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা করতে লাগলেন ।ছেলের পরিবারের চেয়ে মেয়ের পরিবার উপরে থাকবে !!!!এটা যেন তিনি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।একসময় তিনি একটি সরকারি ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা লোন নিয়ে ফেললেন ।উনি ভেবেছিলেন সরকারি ব্যাংক!!! লোনের টাকা ঠিকমতো ফেরত না দিলেও তেমন সমস্যা হবেনা ।আর ম্যনেজার সাহেব তো তার বন্ধু মানুষ ।সে নিজেও নামে বেনামে অনেক টাকাই খাচ্ছে ।যাইহোক এই টাকা দিয়ে তিনি নতুন দোতলা রাজসিক বাড়ি বানালেন এবং বিয়ের খরচ মিটিয়েও তার হাতে যে টাকা ছিল সেটা দিয়ে তিনি রাজার হালে চলতে লাগলেন ।

পরিণতিঃএতদিন পর্যন্ত খুবই ভাল ছিল ।জনাব কামাল দুই হাতে টাকা উড়ান আর নিজেকে খুব ধনী ভেবে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে থাকেন।কিন্তু বিপত্তি বাধে কয়দিন পরেই । কেন্দ্রীয় ব্যংকের কড়া কড়িতে দারুণ চাপের মুখে পড়েন জনাব কামাল ।লুটপাটের কারণে তার বন্ধু ম্যানেজার সাহেবও চাকরি হারান।নতুন ম্যানেজার সৎ এবং দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত কঠোর হস্ত ।এইবার জনাব কামাল চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন, কীভাবে তিনি এতগুলো টাকা পরিশোধ করবেন !!!এই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়লেন।কিছু দিন অসুস্থ অবস্থায় থেকে একদিন তিনি এই ধরাধাম ত্যাগ করলেন ।

পর্যবেক্ষণ-৩ঃ
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উচচমাধ্যমিক পর্যায়। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তিনি চান তার শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে নিজ নিজ বিভাগের রেজাল্ট অন্য বিভাগের চেয়ে যেন ভাল করেন ।খুব ভাল। প্রিন্সিপ্যাল সাহেব আবার এ ব্যাপারে একটু অন্য রকম ।তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না ।তাই বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্টের পর তিনি রেজাল্ট শিটে কোন বিভাগে এ প্লাস বেশি এবং ফেইলের সংখ্যা কম তা দেখে সে অনুযায়ী শিক্ষকদের বিভিন্ন সুবিধাদি প্রদান করে থাকেন ।এর ফলে শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দেয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ।কাকে পিছনে ফেলে কে এগিয়ে যাবে !!!!!আর যায় কোথায় !শিক্ষকেরা নীতি নৈতিকতার ধার আর কত ধারবেন !শিক্ষকতা পেশার মহত্ব ঝেড়ে ফেলে একেক জন খাতার মধ্যে চুরি করা শুরু করলেন আর যার সাথে এঁটে উঠতে পারেন না আর ভাল শিক্ষক চুরি টুরি করেন না তাদের কে বিভিন্ন দোষে দোষী করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া করতে লাগলেন ।
পরিণতিঃ মহৎ নামের কুলাংগার শিক্ষকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি খুব ভালই চলতে লাগল।ইন্টারনাল পরীক্ষা গুলোতে খুব ভাল রেজালট হলেও বোর্ড পরীক্ষাতে দিন দিন উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট খারাপ হতে খারাপতর হতে থাকল।এই হল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।

প্রতিযোগিতা অবশ্যই ভাল একটি বিষয় ।প্রতিযোগিতা ছাড়া কেউ সামনে এগোতে পারে না।কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা সুস্থ না অসুস্থ তা কঠোর ভাবে খেয়াল রাখা উচিত ।।

Visits: 1

মন্তব্য
Loading...
//chaungourtee.com/4/4139233