নীতি ঠিক থাকবো ক্যামনে?
রাস্তায় বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর হলো রিকশাওয়ালার দাবিকৃত ভাড়া। কারণ সে নায্য ভাড়ার চেয়ে ডাবল, কখনোবা ট্রিপল ভাড়া চেয়ে বসে। যেটা আমার দৃষ্টিতে অন্যায়। আর এসব অন্যায় হতে দেখে যখন কিছু করার থাকে না বরং উপায়ান্তর না দেখে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই চড়তে হয় তখন মেজাজ হয় আরো তুঙ্গে। এমনই একদিন অনেকক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অতঃপর রিকশায় চড়ে রিকশাওয়ালাকে বলেই ফেলি-
আমিঃ এটা ঠিক না! আপনারা এতো বেশি ভাড়া কেনো চান?
রিকশাওয়ালাঃ (হেসে হেসে) বেশি ভাড়া না চায়া উপায় আছে? বউ-বাচ্চা নিয়া চলন লাগবো না? দেখেন না, জিনিসপত্রের দাম কতো বাড়ছে!
আমিঃ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তা জানি, তবে জিনিসের দাম ৫ টাকা বাড়লে আপনারা ১০-১৫ টাকা ভাড়া বাড়ায়া দেন। এটা ঠিক? একটা নীতি-নৈতিকতা থাকা উচিত।
রিকশাওয়ালাঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আর……. নীতি ঠিক থাকবো ক্যামনে? আশেপাশে যা দেখি… সমাজ-পরিবেশ- সবখানে খারাপের ছড়াছড়ি।
আমিঃ আপনে কোন বিষয়ে বলছেন?
রিকশাওয়ালাঃ দেখেন, আপনে মনে কিছু নিয়েন না। কথাগুলা আপনারে বলতাছি, হয়ত আপনে বুঝবেন। আপনার বয়সের পোলা-মাইয়ারা কলেজের কোণায়, চিপা-চাপায়-যেসব খারাপ কাজ করে; আমরা তো এসব দেখি। আমার দেইখা খারাপ লাগে। আর রিকশায় ছেলে-মেয়ে উইঠা কি কি কথা কয়-সবই তো শুনি। আমার কথা হইলো- “তোরা যে (লুকায়া) এমন করস, এইটা দেইখা ছোটরা কি শিখবো”?
আমিঃ হুম…ঠিক বলেছেন।
রিকশাওয়ালাঃ আরেকটা কথা বলতে, আমারও একটা ছোট মাইয়া আছে। তারে নিয়ে আমি অনেক চিন্তায় আছি। আশেপাশের পরিবেশ তো খারাপ। তারে কুনখানে ভর্তি করামু, কই পড়ামু… আবার পড়তে গিয়া যদি ওগুলা শিখে তখন?…
আসলেই, রিকশাওয়ালা যে নীতি-নৈতিকতার কথা বলেছেন, সেই কথা হয়তো আমরা অনেকেই চিন্তা করি না। আর চিন্তা তো দূরে থাক, বরং ক্যাম্পাসের কোণায় বা রাস্তার ফুটপাথে কিংবা হোটেলের রুমে দেদারসে অনৈতিক সম্পর্ক গঠিত হচ্ছে, আবেগের ছড়াছড়ি; নেই দায়িত্ববোধ কিংবা সচেতনতা। না নিজের জীবন সম্পর্কে না অন্যের জীবন সম্পর্কে। আর ক্যাম্পাসের ভিতর তথা একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন অনৈতিক কার্যকলাপের প্রসঙ্গ উঠেছেই- তাহলে এটা বলতেই হয়- আমাদের শিক্ষকরাও যেনো আজকাল অনেক কিছু দেখেও অদেখা করেন, অথচ তারা পারতেন ক্লাস ভরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে, অনৈতিক কাজের বিপরীতে নৈতিকতার পথ দেখাতে। শুধু তাই নয়- বরং ক্যাপাসের চিপায়, সিড়ির কোণায় যখন ছেলে-মেয়েরা ভালোবাসার প্রদর্শনী করে- তখনই শিক্ষকরা পারেন সেটা রুখে দিতে। কিন্তু না, শিক্ষক জাতি আজ নির্বাক। শিক্ষার্থী খারাপ হবে না, তো কি হবে?
সে যাই হোক- একটা সুষ্ঠ সমাজ, একটা সুন্দর মন ও একটা মানুষের আবেগ নষ্ট হওয়ার জন্য অনৈতিক সম্পর্কই দায়ী। সুতরাং, আমাদেরই ভাবতে হবে- আমরা কি চাই?
Visits: 0