টাকার মোহে মেয়ের মা-বাবারাও অন্ধ হয়ে যায়…

0 ৭৭

মা-বাবা সিদ্ধান্তে অটল-“এবার মেয়ের বিয়ে দিতে হবে”। বর পছন্দের দিক দিয়ে মেয়ের মা-বাবার শর্ত তেমনই যেমন অধিকাংশ মা-বাবাদের হয়ে থাকে। ছেলের কামাই ভালো হতে হবে, স্থায়ী ঠিকানা থাকতে হবে, বাবার উত্তরাধিকার থেকে নিজের আলাদা ফ্ল্যাট থাকলে আরো ভালো, দেখতে লম্বা-চাওড়া- হ্যান্ডসাম, আর বংশের মান-মর্যাদা উঁচু হলে তো কথাই নাই।

তেমনই এক প্রস্তাব এসেছে বাবার কাছে। দেখালো তার স্ত্রীকে। মা-বাবা বড্ড খুশি! তারা যেমনটি চাচ্ছিলেন, তেমনই ছেলে পাওয়া গেছে। এবার মেয়েকে জিজ্ঞাসার পালা।
বাবাঃ (বায়োডাটা মেয়েকে দেখিয়ে) কি? কেমন লাগলো?
মেয়েঃ হুম, ভালোই তবে, বায়োডাটা দেখে তো কিছু বলা যায় না। আচ্ছা, ছেলেটা ধার্মিক? নামাজ-তাফসির-হাদিস পড়ে তো…?
মাঃ তোমার ওসব নিয়া রাখো!
বাবাঃ ছেলেকে তো আমি দেখেছি। হ্যান্ডসাম, সুন্দর, নিজের বাড়ি নিজেই ডিজাইন করে বানিয়েছে। কি যে সুন্দর! শুনলাম, বিয়ের পরে আলাদা ফ্ল্যাটে বউ নিয়ে থাকবে। সেখানে বিয়ে হলে অনেক আরামে থাকবা…
মেয়েঃ হ্যা, ঠিক আছে, তবে আমি তো একটা শর্তই দিয়েছি, ছেলেটা তেমন কিনা, তার মানসিকতা…
বাবাঃ আচ্ছা… তুমি যখন বলছো, তাহলে কালই এলাকার মসজিদে খোঁজ নিবো.
(খবর নেয়ার পর আবার মা-বাবা-মেয়ে একসাথে)

বাবাঃ আমি খবর নিয়েছি। দেখো মেয়ে! সবাই কিন্তু পৃথিবীতে এক রকম হয় না। অনেকে হয় আগে এক রকম থাকে, পরে ঠিক হয়ে যায়। আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনো, আমি তোমার বাবা- আমি তোমার জন্য ভালোটাই চাইবো, খারাপ না। যাই হোক- ঈমাম সাহেবকে জিজ্ঞাস করায়, তিনি বলেছেন…ছেলেটাকে নাকি কখনো মসজিদেই দেখেন নি, শুক্রুবারেও না…
মেয়েঃ তো ব্যস! কথা এখানেই শেষ! রিজেক্ট।
মাঃ এভাবে রিজেক্ট করে নাকি মানুষ? দেখলো না, কিছু না!
মেয়েঃ আর দেখার কি দরকার? ছেলে যেখানে নামাজই পড়ে না, সেখানে ক্বুর’আন-হাদিসের প্রসঙ্গ না হয় আর তুললামই না।
মাঃ দেখো, সবাই তরূণ বয়সে ওরকম একটু থাকেই। পরে ভালো হয়ে যায়…
মেয়েঃ যে তরূণ বয়সে ভালো হতে পারলো না, সে পরে ভালো হয়ে যাবে-সেটার কি ভারসা?
বাবাঃ আচ্ছা,আমি বলি- ছেলে নামাজ পড়ে না-ঠিক আছে। বিয়ের পরে তুমি তাকে ঠিক করে নিও, কি পারবা না?
মেয়েঃ আমি সেরকম খারাপ ছেলেকে ভালো করার নিয়ত নিয়ে বিয়ে করতে চাই না। ওসব নাটকে দেখায়। বাস্তবতা নয়। এমনও দেখা গেছে- বউ ভালো একটা কথা বললো আর স্বামী হটকারিতাবশত নিজের ভুলের উপরই টিকে থাকার জিদ ধরে আছে। তাই, বস্তবতা অনেক কঠিন, আলাদীনের চেরাগের মতো এতো সহজ নয়- যে, বললাম আর ঠিক হয়ে যাবে। জানি, সমাজে এমন ধারণা প্রচলিত। নিজের খারাপ ছেলেকে একটা ভালো মেয়ের কাছে বিয়ে দিয়ে খোদ ছেলের মা-বাবা বউ এর ওপর দায়িত্ব দিয়ে বলে- বউ সব কিছু ঠিক করে ফেলবে। অথচ পরবর্তিতে দেখা যায়- অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হতে হয় সেই বউকেই।
মাঃ আচ্ছা, তুমি এতো খারাপ খরাপ বলছো কি অর্থে? ছেলেটা কি চোর, গুন্ডা, নেশাখোর?
মেয়েঃ যদি সেরকম হয় তো?
মাঃ তো, বিয়ের পরে সেরকম দেখলে তালাক নিয়ে চলে আসবি।
মেয়েঃ কি? তালাক? এটা কি কোনো খেলা নাকি? আর তালাক হলে আমার কি হবে? সবাই আমাকে বলবে- তালাকপ্রাপ্ত নারী! আর আমাদের সমাজে তালাকে স্ত্রী’র দোষ আছে নাকি স্বামীর-সেটা দেখা হয় না। তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের সহজে কেউ বিয়ে করতে চায় না। হোক, আগের বিয়ের স্থায়িত্ব মাত্র একরাত। কিছু না হলেও লোকে অন্য চোখে দেখে!
(এবার সবাই চুপ)

এটা সত্য টাকার মোহ মানুষকে অন্ধ করে দেয়, অন্ধ করে দেয়- বিয়ের আগে মেয়ের মা-বাবাকেও, তারা মনে করে আমার মেয়ে অনেক ভালো থাকবে- কিন্তু, সেই টাকাওয়ালা ছেলের যখন মানসিকতা থাকে উগ্র, কিংবা অনৈতিক- তখন বিয়ের পরে আফসোস করেও কিছু হয় না।

উপরের ক্যাস স্ট্যাডি’র শেষ কিন্তু হয় নি। কয়েকমাস আগে সেই ছেলেটার ব্যাপারে জানা যায়- ছেলেটার বিয়ে হয়েছে অন্য একটা মেয়ের সাথে। তবে ছেলে নাকি এতোই ঝগড়াটে আর বেয়াদব যে- সম্পত্তি নিয়ে নিজের বাবার সাথে ঝগড়াঝাটি, আর হয়ত এখন আলাদা থাকে- অথচ ছেলের বাবাই নিজের একমাত্র ছেলের জন্য একসময় এলাকায় গর্ব করে ফিরতো!

Visits: 2

মন্তব্য
Loading...
//oogrutse.net/4/4139233