ঘটক যখন ডাকাতঃ

0 ৬৯

বিবাহযোগ্য ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারে শিরোনামের সত্যতা যাচাই হয়েছে। শুধু তাই নয়- ডাকাত তো জোরপূর্বক টাকা-সম্পদ আত্মসাৎ করে কিন্তু বর্তমানে ঘটকরা ডাকাতের চেয়েও সাঙ্ঘাতিক! এরা মানুষের দূর্বলতা, আবেগ ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে, কখনো ভুলিয়ে-ফুসলিয়ে, কোথাও বা জোর দাবি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেক পরিবারেই মা-বাবারা নিরুপায় হয়ে দিয়ে যাচ্ছে, কোথাওবা ঘটকের খরচা চালাতে না পেরে অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে মনোমালিন্য। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, বছরের পর বছর অভিভাবকেরা টাকা দিয়ে যাচ্ছেন, অথচ ঘটকের দ্বারা কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সন্দেহ হচ্ছে এটা কি ঘটকের চালাকি নাকি এটাই এখন তাদের ধান্দা!

ঢাকার শাহজাদপুরের একটু আগে অবস্থিত, বড় ও অভিজাত ডেকোরেশনে সজ্জিত এক ম্যারেজ মেকিং সংস্থা সরে জমিনে দেখে এসে এক মুরুব্বি জানান- ‘নিজের মেয়ের জন্য সেখানে খোঁজখবর নিতে গিয়ে প্রথমেই সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাই। একটা ম্যারেজ কোম্পানীর এতো হাইফাই স্ট্যাটাস কি স্বার্থে? ভিতরে আর কি হয়’? এদিকে অফিসের কর্মকর্তার দাবী- “বায়োডাটা জমা দেয়া মাত্র ৫০০০টাকা জমা দিতে হবে, পরে আপনার দেয়া বায়োডাটার সাথে কারো বায়োডাটা মানানসই হলে জানানো হবে”। তবে সন্দেহের বিষয় হচ্ছে- যে জানানোর কথা এরা বলছে- সেটা যেখানে একটা ফোন কলেই হচ্ছে- তার জন্য ৫০০০টাকা কেনো? তাছাড়া তারা টাকা নিয়ে লম্পট হবে না- এর কি গ্যারেন্টি আছে? এদিকে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে- এরা নিজেদের কর্মে একটা হালালের লেভেল লাগানোর জন্য ম্যারেজ কোম্পানীর আগে “মুসলিম” শব্দ জুড়ে দিয়েছে। যাতে কেউ সন্দেহ না করে। হায় রে মুসলমান! ধর্মকে আর কতো বদনাম করবি? যেখানে তোরা নিজেরাই খারাপ!?

যাই হোক- এবার কিছু সাইনবোর্ড ছাড়া লোকাল ঘটকের কথা বলি। এদের দাবি হলো- কাজ হাতে নেয়া মাত্র ৫০০টাকা। আর পরবর্তীতে যতবার বাসায় আসবে- ততবার ২০০টাকা। আর বিয়ে হয়ে গেলে ২০,০০০টাকা। তবে এই টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়। স্থান ভেদে বিভিন্ন হয়। এক ঘটক নিজেই বলেন- “আমার ধানমন্ডি এলাকায় এক রেট, অলি-গলিতে ভিন্ন রেট। কোনো বাড়িতে ঢুকে আমি ১০০০টাকাও নিয়ে নিই”। তবে তাদের এরূপ জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে শিমু (ছদ্মনাম) নামে এক পাত্রী বলেন- “ঘটকের জ্বালা যন্ত্রনা অনেক। বাসায় আসলেই ৫০০টাকা। বার বার কি এতো টাকা দেয়া সম্ভব? এতো খরচের জন্য এসব থেকে মন উঠে গেছে”।

অপরদিকে, বার বার এতো টাকা দেয়ার পরও চলে ঘটকের প্রতারণা, অসমাপ্ত কাজ ও ধূর্ততা। দেখা যায়- যে কাজ সামান্য ফোনে হয়ে যায়- সেটার না জানিয়ে, অসমাপ্ত প্রস্তাব নিয়ে হুট করে বাসায় উঠে আসে, উদ্দেশ্য টাকা নেয়া। এদিকে কখনো ফোন করার প্রয়োজন হলে শুধু মিসকল দেয়, ফোন করে না। যাতে নিজের এক টাকাও খরচ না হয়। অথচ এতো টাকা দিয়ে করছে কি?

সুতরাং, সত্য হলো- ঘটকের অভ্যন্তরীণ জ্বালায় অধিকাংশ পরিবারের পাত্র-পাত্রী, অভিভাবক- সবাই অতিষ্ঠ কিন্তু লোকলজ্জায় কিছু বলছেন না। তাই ভালো ঘটক তারাই যারা ঘটকালিকে পেশা হিসাবে নয় বরং নেশা হিসাবে নিয়েছেন। যারা নেক কাজে অংশীদার হিসাবে বিনামূল্যে এ কাজে এগিয়ে আসেন, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করেন। তবে বাস্তবে এমন লোকের সংখ্যা খুব কম, হাতে গোনা। তবে হ্যা, দুনিয়ার সবাই যে এক হবে তাও না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এক মহিলাকে চিনি যার স্বামী মারা গেছেন, সন্তানেরা নিজ খরচ নিজে চালায়, আর মা মানে সেই ব্যক্তি হাত খরচ বাবদ ঘটকালি করেন, তবে সামান্য টাকায়। যেটা দিয়ে হয়তো মোবাইল খরচ কিংবা রিকশাভাড়াই হয়। সুতরাং, এই মহিলার পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদেরকেই ভালো ঘটক বলা যায়- যারা মানুষের ওপর জুলুম না করে সামান্য টাকায় ঘটকালি করে ও বিয়ে হয়ে গেলে তাদের সামর্থ্য বুঝে সালামী নিয়ে নেয়…

Visits: 1

মন্তব্য
Loading...
//feetheho.com/4/4139233