সম্পর্কের মাত্রা !

0 ৭৬

১.

মা। একটি মাত্র শব্দ। কিন্তু দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শব্দ এটি। শিশুর প্রথম বলতে পারা বোল। আবেগের কেন্দ্রস্থল। সম্পর্কের মাত্রা নির্ণায়ক।

মা’কে ভালোবাসে না এমন মানুষ আছে পৃথিবীতে? থাকতে পারে ! সে কী মানুষ? প্রশ্ন তোলা অবাঞ্চিত হবে কী? আমার কাছে প্রশ্ন তোলাই বাঞ্চিত মনে হয়। সৃষ্টিকর্তা পরম মমতায়। খুব সুরতে আমাদেরকে বানিয়েছেন ! সৌন্দর্য পিপাসা সেখান থেকেই। সৌন্দর্য পিয়াসীরা কখনও তুলিতে, কখনওবা কবিতা- গল্পে, আবার কখনও ঘুরতে বেড়ানোর  কাহিনীতে সৌন্দর্যকে অল্প-বিস্তর বর্ণনা করতে প্রয়াসী হন। পৃথিবীতে আগমনের পূবমুহূর্তেই আমরা যে মানুষটাকে কষ্ট দেই। তিনি আমাদের মা। সীমাহীন কষ্ট সয়েও তিনি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলেন অনায়াসে। এতে কোনো কৃত্রিমতা থাকে না। থাকে না কোনো মান- অভিমান। শত যন্ত্রনা বয়েও আমাদের জম্মের আগে- পরে বেখালি হন না,  না জানি আমরা কষ্ট পাই !

স্বার্থপূজারী এই বসতভিটায় একমাত্র নিঃস্বার্থ মানুষ হিসাবে কেবল মাকেই খুঁজে পাই। মা তাঁর সমগ্র ভালোবাসা আকাশের মতো বিশালতায় উজাড় করে দিতে পারেন সন্তানের মঙ্গল কামনায়। ছোটবেলার মতোই মা সন্তানদের নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে চান পরম মমতায়। সবসময়ই। শুধু সন্তানদেরকেই নয়। মানুষের রক্তের বন্ধনে গড়ে ওঠা পরিবারকে আগলে রাখেন মা। মা আছে বলেই মানুষ এখনও ঘরে ফিরে। নাড়ির টানে। নয়তো কর্মচাঞ্চল্য কবেই থেমে যেত ! মা’কে দুনিয়ার তাবৎ ভালোবাসা উৎসর্গ করলেও ঋণ শোধবে না ! তবুও আমরা আমাদের প্রত্যহ জীবনে মাকেই বেশি কষ্ট দেই। যত রাগ মায়ের উপর। কেনো এমনটা? এটাও কী মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই !

যত কষ্টই দেই না কেনো মা ভালোবাসায় ফের বুকেই ঠাই দেয়। আশ্রয় দেয় আঁচলে। পৃথিবীতে এর চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় আর কোথায় আছে ! মায়ের জন্যই হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা । মা ! তুমি ভালো থেকো সব সময়ই।

মলিন বদনে তোমায় বড়ই বেমানান দেখায় ! হাসিই শোভা তোমার !

২.

হাসি ! হাসিই তোর জীবনের সঙ্গী হোক চিরকাল । তুই যখন দুনিয়ার আলো- বাতাসে এলি। তখনই কেমন হাসি হাসি মুখ। সবাই বলছিলো, এই দেখো,  কেমন হাসছে ! ডাকছেও হাসি নামে। তখন থেকেই তুই হাসি হয়ে গেলি। হাসি ছাড়া আমরা নিষ্প্রাণ ছিলাম । হাসির আগমনে সবার মুখেই হাসি ফুটলো।

হাসি আমার বোন। ছোট বোন। একমাত্র বোন। আমরা তিন ভাইয়ের এক কলিজা । ওখান থেকেই আমাদের হাসি- আনন্দের স্রোতধারা । হাসি কাঁদলে আমার ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। চোখের ঝরণার প্রবাহ শুরু হয়ে যায়। খনিকের জীবন মায়ায় অর্ধেকটা মায়া যেনো বোনকে ঘিরে। সেই ছোটবেলা সারাক্ষণ ছোট্র বোনটির পাশে বসে তাঁর তুলতুলে হাত- পা নিয়ে খেলা করা। ছোট্র বোনটির কান্না দমানোর অভিনব সব কায়দা- কানুন। বড় হবার সাথে সাথে চিমটি কাটা। কানাঘুষা। ভাইকে মনের মাধুরী মিশিয়ে মেয়েদের সাজে সাজিয়ে দেয়া। একটু খেলছে, গিয়ে খেলা ভঙ্গ করে রাগিয়ে তোলা। মায়ের বকুনিতে চোখ- কান বন্ধ করে বোনের পাশে দাড়ানো। কিম্বা পরিকল্পিত ঝগড়ায় মজা লুটা। মা- মেয়ের বনিতায় নিরব শ্রোতা- দর্শকের চেপেধরা অট্রহাসি। ব্যস্তময় জীবনযাত্রায় ছোট্র বোনটির একটি ফোন কলের অপেক্ষায় কাতর হয়ে ওঠা। এসব জীবনের গহীন অরণ্যের অনুভূতি নাকি শিশির ভেজা ঘাসের উপর সকালের মিষ্টি রোদ্দুরের চিক চিক করার মতো সৌন্দর্য !

৩.

বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল ! একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের টাইটেল ছিলো এটি। বিশেষ করে তরুণ- তরুণীদের মাঝে বিজ্ঞাপনটি স্থায়ীভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে। আমাদের বাস্তব জীবনেও বন্ধুহীনতা কল্পনাও করা যায় না। তবে বন্ধুত্বের ধরণ দিনকে দিন পাল্টে যাচ্ছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়কার বন্ধুত্ব আর আমাদের সময়কার বন্ধুত্বের মধ্যে তফাৎ বিস্তর। তখন বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো অনেক গভীরে প্রোথিত। এক বন্ধু অপর বন্ধুকে আপ্রাণ ভালোবাসতো। বন্ধুত্বের খবর ছাড়িয়ে যেতো এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে। একে অন্যের পরিবারেও বিশেষ মর্যাদা লাভ করতো। একে অন্যের বেশিরভাগ কথা জানতো। সেটা নিয়ে চিন্তা করতো। এ ধরনের সম্পর্ক কোনো সীমারেখায় এসে থেমে যেতো না। থাকতো আজীবন। এ ধরনের সম্পর্ক যদিও গ্রামীণ সমাজে গড়ে উঠতো তবে শহুরে সমাজেও এর অস্তিত্ব ছিলো কম-বেশি্।

চলমান সময়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। হারিয়ে যাচ্ছে বন্ধুত্বের আসল রুপ। এখনকার বন্ধুত্বের ধরণ অনেকটা চলমানতার উপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। স্কুল জীবনের বন্ধুত্ব স্কুলের গন্ডি ফেরুলেই শেষ। কলেজ ও ইউনিভার্সিটি জীবনও একই রকম। যেহেতু মানুষ এখন অনেক বেশি ভাসমান । সেহেতু স্বীয় এলাকা বা বাপ- দাদার ভিটে- মাটির এলাকায় বন্ধুত্ব গড়েই ওঠে না এখন। বন্ধুত্ব এখন নানাবিধ সীমারেখায় আবদ্ধ। এখনকার সময় এক বন্ধু অপর বন্ধুর বাড়ি কোথায় কিম্বা তাদের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে বলতে অক্ষম হয়ে পড়বে। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা অনেকটাই ঠুনকো। তার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে মানুষের স্বার্থবাদিতা দায়ী। অন্যদিকে মানুষের উপর মানুষের বিশ্বাসহীনতা ক্রমশই বাড়ছে। ভালোবাসা কমছে। ফলে প্রকৃত বন্ধুত্ব বিলীন হয়ে পড়ছে।

আমরা তিনবন্ধু একসাথে থাকি ঢাকায়।সবারই গ্রামের বাড়ি একই এলাকায়। তারপরও আমরা জানি না একে অন্যকে, যেভাবে জানা দরকার । যাওয়া হয়নি একে অন্যের বাড়িতে। জানা হয় নি একে অন্যের কল্পকথা । এ কালের বন্ধুত্ব তো এ রকমই হয়ে থাকে ! নাহ, আমরা একটু উপরের লেভেলে আছি। একটা পরিবারের মতোই চলছে জীবনযাত্রা । আরেকজন কাছের বন্ধু বিয়ে করে বউ নিয়ে বই ছেড়ে বন্ধু ভুলে আছে বেশ। থাক তোরা। সুখে থাকিস। তবে আমাদের মধ্যে এখনও ঝগড়া হয়নি। ঝগড়া ছাড়া কী বন্ধুত্ব গাঢ় হয় ? বন্ধুত্ব অটুট থাকুক ব্যস্ততম গোটা জীবনময়।

৪.

দু’ জনের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ক কথা হচ্ছিলো …

– একটা প্রশ্ন করবো ?
– হুম…
– আপনি কি আমাকে ভালবাসেন ?
– না।
– সত্য করে বলুন আমি মাইন্ড করবো না !!
– আমি কি মিথ্যে বলি ?
– তাহলে কতটুকু ঘৃনা করেন ?
– একটা প্রশ্ন করার কথা ছিলো !
– সম্পূরক প্রশ্ন তো থাকতেই পারে !
– ভেবে উত্তর দিতে হবে। কঠিন প্রশ্ন !
– আচ্ছা, ভেবেই উত্তর দেন ।
– ক’দিন সময় দিতে হবে ।
– আচ্ছা, ঠিক আছে। দিলাম। তবে তাড়াতাড়ি।

দু’দিন পর…

– কত দিনই তো পেরিয়ে গেলো !
– ঘৃনার পরিমান =- ০০ %,  ঈর্ষা = কিঞ্চিৎ !
– তার মানে দাড়ায় আপনি আমাকে ভালোবাসেন না আবার ঘৃণাও করেন না !! মানে আমি এক অপরিচিত কেউ ?
– আপনি সাইন্সের স্টুডেন্ট ! কি বুঝেছেন আল্লাহ জানে ? বুদ্ধি খাটিয়ে দেখুন….
– আমি বোকা মানুষ !
– হিট এন্ড সাউন্ড চ্যাপ্টারের থিওরি দিয়ে উত্তর দিলুম !
………………………………………………

চলুন সবাই মিলে হিট এন্ড সাউন্ড চ্যাপ্টারটায় চোখ বুলিয়ে দেখে আসি !!

৫.

ভালোবাসা । কী মধুর শব্দ? শুনতেই ভালো লাগে। শুনতেই ভালো লাগে এরকম আরেকটি শব্দ হলো মা। ভালোবাসাই তো সব। মানুষের বেঁচে থাকার শক্তি। গোটা পৃথিবী টিকে আছে ভালোবাসার শক্তি বলেই। যেদিন জম্মেছি সেদিন থেকেই মাকে ভালোবাসি। সুন্দর ধরাকে ভালোবাসি। বড় হচ্ছি পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ভালোবাসাতেই। বড় হয়ে দেখছি যেখানে ভালোবাসার কমতি আছে । পাশ্চাত্যে ! সেখানে মা কুকুরের বাচ্চাকে কোলো নেয় আর নিজের বাচ্চা পড়ে থাকে অবহেলায়-অনাদরে। পারিবারিক কোন কাঠামো নাই। যে যার মতো করে চলে। তাদের ভালোবাসার অভাব বলেই একটি দিনের ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।
সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসি। যার করুণায় এ ধরায় আমার আগমণ। নচেৎ ‘আমি’ কে ? অন্যরা অকৃতজ্ঞ। কৃপণ।

মানুষের চলার পথে প্রতিটি কাজে কিছু নীতিমালা থাকে। কথার কথা না। বাস্তবে। এই নীতিমালা উৎসারিত হয় মানুষের বিশ্বাস থেকে। তেমনি ভালোবাসাও বিশ্বাস দ্বারা শৃঙ্খলিত হওয়া চাই। লাগাম ছাড়া না। ভালোবাসা শুধু একটি ছেলে কিংবা মেয়ের ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা এত সংকীর্ণ না। ভালোবাসা অনেক বিশাল। সাগর- মহাসাগরের চেয়েও বিশাল ! একজোড় কিশোর-কিশোরীর হাতিরঝিলে পড়ে মরা কোনভাবেই ভালোবাসা না। এখন যা হয় তা তো বেহায়াপনা-বিশৃঙ্খল জীবন। রাষ্ট্রপ্রধান তার দেশের সকল নাগরিককে সমানভাবে ভালোবাসলে এভাবে গুলি করে মারতো না। দেশের নাগরিকরা দেশকে ভালোবাসলে এভাবে দূর্নীতি করতো না । ভালোবাসা সবর্ত্র ছড়িয়ে পড়ুক। ভালোবাসা বোধ আর মননকে জাগ্রত করুক। এই চাওয়া।

Visits: 2

মন্তব্য
Loading...
//gaptooju.net/4/4139233