আপনিও পারবেন …

0 ৯২

ঘটনাটা ১৯ শতকের শেষ দিকের………………….

একজন মিস্ত্রি আমেরিকার মিসিগান রাজ্যের ডেট্রয়েটের ইলেক্ট্রিক লাইট কোম্পানীতে কাজ করতো। প্রতিদিন দশ ঘন্টা কাজ করে মাত্র ১১ ডলার আয় করতে পারতো । কিন্তু রাতে বাড়ি ফিরে সে নিজেকে একটা বিশেষ কাজে নিযুক্ত রাখতো। আর তা হলো এক ধরনের বিশেষ ইঞ্জিন তৈরির কাজ। সবাই তাকে পাগল ভাবতো। পাগল ভাবতো না শুধু তার স্ত্রী। বিশ্বাস করতো তার স্বামীকে। শত ব্যস্ততার মাঝেও তার স্বামীকে সাহায্য করতো। আর দিতো প্রচুর উৎসাহ। তিনি ভাবতেন তার স্বামী একদিন সফল হবেনই। স্ত্রীর উৎসাহ স্বামী বেচারার মনে এনে দেয় আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা।

অবশেষে ১৮৯৩ সালে এক বিচিত্র ঝটনা সকলকে অবাক করে দেয়। একদিন পড়া পড়শীরা ক্রমাগত কিছু অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলো। তারা পথের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেই পাগল যুবকটি তার স্ত্রীকে নিয়ে একটি ঘোড়া বিহীন গাড়িতে রাস্তা দিয়ে চলছে। কিছুদুর যাওয়ার পরে ফিরেও এলো। পাড়া প্রতিবেশিরা অবাক।

ওই পাগল যুবকটির নাম কি জানেন? নাম হচ্ছে, হেনরি ফোর্ড। মোটর গাড়ির আবিষ্কারক। তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন তার স্ত্রীর উৎসাহের কারণেই তিনি এটা করতে পেরেছিলেন।

এখন আমাদের কাজ কি? আমাদের কাজ হচ্ছে, একটা বিয়ে করে নেওয়া। তারপর স্ত্রীকে বলা আমাকে উৎসাহ দাও বেইবি! আমি একটা সুপার খাম্পিউটার অ্যাবিষ্কার করে ফেলি। না তা করবেন না? কি করবেন? আপনার কিছুই করতে হবে না। আপনার অভিভাবকের সামনে গিয়ে এই পোস্টটা পড়বেন। আমাদের সমাজের অভিভাবকদের একটা বৃহৎ অংশ নিজের সন্তানের সমালোচনা করে থাকেন। অমুকের ছেলে এটা পারে তুই কেন পারস না। অমুকের ছেলে জোল্ডেন পাইছে তুই কেন এ পিলাচ পাই লি? অমুকে ছেলে অমুক জায়গায় চান্স পাইছে তুই কেন পাইলি না?

এ ধরনের অভিভাবকদের কাছে পাইলে বিনযের সহিত জিজ্ঞাস করতাম। আপনি কয়দিন আপনার সন্তানকে বলেছেন, বাবা আমার তোর উপর বিশ্বাস আছে তুই একটা কিছু করে দেখাবি। আমি জানি তুই এবার চান্স পাবিই। আমি জানি তুই তোর ক্যারিয়ারটা গড়তে পারবি। কেউ বলে না কথা গুলো। কথা গুলো বলে দেখুন, আপনার ছেলে আপনার বকুনি খেয়ে যদি দুই ঘন্টা পড়াশোনা করে তবে আজ চার ঘন্টা পড়বে। সিওর!

আমার আম্মা আমার অগোচরে আমার প্রশংসা করতেন। তবে আমাকে শুনিয়ে। আমি কোনো সফল ব্যক্তিত্ব হয়ে যাই নি। তবে আমার প্রতি আমার বাবা মা এখনও সন্তুষ্ট। কিভাবে জানলাম? মায়ের মুখ দেখলেই বলা যায়। আমার মা নিরক্ষর। তবে এই ভালো শিক্ষাটা কোথায় পেলেন? জানি না। হয়তোবা প্রকৃতি শিখিযেছে। সব চাইতে বেশি ইয়ার্কি করি মায়ের সাথে। সবচাইতে বেশি ধমকাই মাকেই। তবুও হাসে। বাবা লোকজনকে বলতো, দেখো আমার ছেলে ভার্সিটিতে পড়বে। এতে করে কি হতো জানেন? আমার দায়িত্বটা বেড়ে যেত। বাবা মানুষের সাথে বলে ফেলেছে। বাবার মুখ রক্ষা করতে হবে।

তেমনি আপনার সন্তানকে দায়িত্বটা দিয়ে দিন। বড় ভাইযেরা ছোট ভাই বোনকে দাযিত্বটা দিয়ে দিন। তাদের প্রশংসা করুন। করেই দেখুন, দুইয়ের জায়গায় চার হয়ে যাবে। শুধু ছোট না, বড়দেরও প্রশংসা করুন। প্রশংসা এমন একটা জিনিস যেটা সবাই চায়।

আরেকটা গল্প বলি, আমার মামাতো বোনের বাসায় আমার আপন বোনের চাইতে বেশি বেড়াতে যাই। গোপন রহস্যটা হলো, দুলাভাই খুব ভোজন রসিক। তাই ওখানে গেলেই তার খাবার দাবারের কিয়দংশ আমার ভাগ্যে জুটে। অবশ্য তাতেই পেট ভরে যায়। আবার আসার সময় ফুটা পকেট দেখালে পঞ্চাশটা টাকাও পেয়ে যাই। কাহিনি এটা না, কাহিনি হলো আমার একটা ভাগিনা আছে শিশু শ্রেণীতে পড়ে। আমি গেলেই বলবে, মামা আসছো? ভালো হইছে, তোমার কি কি সমস্যা বলো ওষুধ লিখে দিচ্ছি। লিখে দেয়। লেখাটা বুঝি না (ডাক্তাররদের লেখা কি বুঝা যায়?)তবে মুখে বলে দেয়। এটা লিখছি প্যারাসিটামল। তিনবার খাবা। এইটা অমুক। এটা এলার্জির জন্য। আর শোন, গ্যাসের বড়িটা খাবার আগে খাবা।

ক্যামনে সম্ভব! ওর বাবা ওকে সবসময় পামের উপরে রাখে। গেলেই বলবে, সাব্বির তুই জানিস আমার বাবাটা আগামি পাঁচদিনের পড়া শেষ করে রেখেছে। দেখ বাবা এখনই করে দেখাবে। সাথে সাথে স্টার্ট।

তাই বলছি শুধু বাচ্চার না কারোরই সমালোচনা করবেন না। উৎসাহ দিন। দিয়েই দেখুন আপনার আপনজন ব্যর্থ হবে না। চেষ্টার পরিমাণ দ্বিগুন হয়ে যাবে।

লিখা –
সাব্বির রহমান কাউসার
Department of Law
University of Dhaka



Visits: 5

মন্তব্য
Loading...
//oulsools.com/4/4139233