আমাদের রাজশাহী …

0 ১৩২

বলা হয় শান্তির শহর। শান্ত।চুপচাপ।
খুব ভালো লাগে তখনই যখন কেউ হোমটাউন জানতে চাইলে যখন বলি “রাজশাহী” তখন তারা বলে “ও আচ্ছা,রাজশাহী?অনেক নিরিবিলি একটা শহর। 🙂  ” …শুনে প্রচন্ড ভালো লাগে।
তারপরও আজ একটা অযৌক্তিক উদাহরন দেখে আশ্চর্য হলাম।

বিয়ে বাড়িতে বাজানো গানের প্রেক্ষাপটে একটা শহরকে “ভাগাড়” বলার মত অযৌক্তিক আর কিছু হতে পারে কি? তুলনাটা করেছে একজন মেয়ে। ধরা যাক মিসেস চৌধুরী নাম।

মিসেস চৌধুরি। রাজশাহী অনেক ছোট শহর। পোরশে বা BMW চলেনা এখানে। সামান্য অটো গাড়ি আর রিক্সাতেই কাজ চালাইতে হয় আমাদের। কিন্তু এতেই আমরা সন্তুষ্ট আপু। আমাদের শহরে কোন জ্যাম নেই।
বাস চাঁপা পড়ে যাবার ভয় নেই। এক অন্যরকম শহর, যেখানে জীবনের নিরাপত্তা দেশের অন্য যেকোন জায়গার চেয়ে বেশি।

কখনও রাত দুইটায় রাজশাহীর রাস্তায় বের হয়েছেন? কখনও রাত দেড়টায় রুয়েটের মোড়ে বট পড়টা খেয়েছেন? অথবা বন্ধগেটের ডাবল হিটের চা? অথবা এরফানের পান? অথবা জয়নাল মামার পুরি বার্গার? হনুমানজিউড় মন্দিরের মাশরুম চপ? নিউমার্কেটের বসুন্ধরার ফুচকা? নানকিং এর স্যুপ? সাহেব বাজারের ভাজা? ইবলিস চত্তরের সিঙারা? সন্জয় দার মরিচ চা? আমি বলবো আপনি রাজশাহীকে এখনো চেনেন নি।
আমাদের kfc bfc এর দরকার হয়না চৌধুরি আপু। আমরা আমাদের ওয়ারিসন, চিলিস আইসক্রিম পার্লার , বিশাল,ফুডভিউ,কফি বার নিয়েই থাকতে পারি।

আমাদের কোন রমনা পার্ক নেই,নেই কোন চন্দ্রিমা উদ্যান। তারপরও মাঝে মাঝে পার্কের লেকে পা ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতেই ক্যানো জানি অন্যরকম ভালবাসা কাজ করে।অথবা পদ্মাগার্ডেনে সবাই মিলে আড্ডা?অথবা পরিবার নিয়ে জিয়া পার্ক বেড়ানো। আমাদের সুন্দরবন নেই।আমাদের বিখ্যাত হয়তো কিছুই আপনার চোখে পড়েনা কিন্তু রাত দুইটায়ও আপনি কোর্ট থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত একজন মেয়ে হয়েও একা সেইফলি পৌছাতে পারবেন,গ্যারান্টি দিচ্ছি।
আপনার শহরে এটা পারবেন করতে?

চৌধুরী আপু। রাজশাহীর আবহাওয়া খারাপ। এখানে গরমে অনেক গরম,শীতে অনেক শীত। তারপরও একবার নিজের পজিশান থেকে উত্তরবঙ্গের সেসব মানুষের কথা ভাবুন,যারা আপনার চেয়েও খারাপ দিন পার করে বেঁচে থাকে। কখনও গেছেন পুঠিয়া,তানোর,চারঘাট,গোদাগাড়ি? ঘুরে এসেন। বুঝবেন গ্রাম আসলে কি…

রাজশাহীতে বিএনপি আছে,লীগ আছে,জামায়াত,শিবির,ওয়ার্কার্স পার্টি সবই আছে। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? আমরা সবাই ভাই ভাই। হয়ো হরতালের সময় একটু ঝামেলা শালবাগান বা বিনোদপুরে লাগেই কিন্তু কখনই দেখবেন না দুই দলের সংঘর্ষ। কারন দিন শেষে সবাই আমরা বন্ধু। রাজশাহী সেই জায়গা যেখানে আমরা জানি আমাদের কোন বন্ধু কোন দলের তারপরও জুনিয়ার সিনিয়ার সবাই ঘাড়ে হাত রেখে ঘুড়ে বেড়াই।

ছোট একটা শহর রাজশাহী। কিন্তু মন আমাদের অনেক অনেক অনেক বড়। হ্যা আপনার শহরের মত আমরা বড় নই কিন্তু বিশ্বাস করেন। চলতে ফিরতে একদিনে রাস্তায় বের হলেই আমরা পরিচিতদের মুখ দেখতে পাই। কেউ বাজারে , কেউ লক্ষিপুর মোড়ে, কেউ ভাটাপাড়ায়, কেউ মহিষবাথানে, কেউ কোর্টে। এভাবেই আমাদের নিজেদের বন্ধুত্ব আত্মীয়তা বাড়ে। এটা সবসময়ই বাড়ে। এটাই সেই ছোট শহর চৌধুরী আপু।

এটা সেই শহর যেখানে আমাদের চলতে হয় নিয়মতান্ত্রিকভাবে। খোঁজ নিয়ে দেখো। অন্য সব জেলার মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখো। রাজশাহী নিয়ে সবার রিএকশান। এখানকার মানুষদের সম্পর্কে সবার অভিমত। তুমি একা আসোনি রাজশাহীতে পড়তে। এখানে মানুষ ভিক্ষা করে কম কাজ করে খায় বেশি। ঢাকার মত হাত পেতে বেড়ায়না হাজার শিশু। এখানে প্রতিবেশির বিপদে মানুষ পাশে দাড়াতে জানে।

রাজশাহীর মানুষ অনেক সাধারন। এই simplicity কে যদি আপনি ” গ্রাম্য ” বলেন তবে অনুরোধ করবো রাজশাহীর বন্ধু বানানো ছেড়ে দিন।আপনার ভার্সিটিতে অন্যজেলার মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করুন।আপনি আপনার কথার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন সেজন্যই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। কারন,
বন্ধুত্ব সারাজীবন আর ভালবাসা টিকিয়ে রাখা রাজশাহীর মানুষের পক্ষেই সম্ভব।

আমরা যারা রাজশাহী ছেড়ে অনেক দূরে আছি,হয়তো শরীর এখানে।
কিন্তু মন যার যার তার তার….. একবার হলেও রাজশাহী কে মনে করে।

.
.
.
.
.
.

ফেসবুক অবলম্বনে মাধ্যম Asif Ul Islam

Visits: 3

মন্তব্য
Loading...
//staltoumoaze.com/4/4139233