সময়ের এক ফোঁড়,অসময়ের দশ ফোঁড়
১.
সেকেন্ড ইয়ারে রুমমেট হল ছেড়ে দেয়ায় নতুন রুমমেট দেওয়া হলো।প্রথম থেকেই তাকে পছন্দ না হলেও নতুন হওয়ায় সেটি মেনে নিতে বাধ্য হলাম।
কিছু দিন পরে পলিটিক্যাল বড় ভাইদের বিষয়টি জানালাম।ওখানে কয়েকজন রাজী থাকলে সিনিয়র এক নেতার সাথে ঝামেলা থাকায় রুমের ভাগ্য পরিবর্তন হলোনা। নিজেই রুম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলাম।কিন্তু কোন রুমই খুব একটা পছন্দ হয়না।কিন্তু একটি রুম পছন্দ হলো।সিট পরিবর্তন করতে হলে একজনকে সেই রুম থেকে এই রুমে আনতে হবে।
আমার রুমের আমার সিটের অতিরিক্ত সুবিধা হলো,আমার সিট থেকে ওয়াই-ফাইয়ে ইন্টারনেট চালানো যায়।ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য মডেম বা গেস্টরুমে সময় দিতে হয়না।
আইটির যে ছেলেটির সাথে সিট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলাম,তাকে এই অফারটিসহ আরো কিছু সুবিধা দেখালাম।কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অনড়।সে রুম পরিবর্তন করবেনা। রুম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলাম।পরবর্তীতে নিজেরই ল্যাপটপ হয়ে যাওয়ায় সেই সুবিধাগুলো নিজেই ভোগ করছি।
কিছুদিন পূর্বে সেই ফ্রেন্ডটি রুমে এসে উপস্হিত।বলছে,দোস্ত!তুই না আমার সাথে রুম পরিবর্তন করতে চেয়েছিলি,এখন করবি?
সরাসরিই বলে দিলাম-তখন যে কারণে রুম পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম,এখন আর সেই সমস্যাটি নেই।
পরে বললাম-তোমাকে যখন আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম,তখন তুমি আমার প্রস্তাবকে উপেক্ষা করেছিলে।আজ সময়ের ব্যবধানে তুমিই আমাকে সেই প্রস্তাব দিচ্ছো।
সে নিরবে চলে গেলো।
২.
স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠণ ‘বাঁধন’ এর সাথে যুক্ত ছিলাম ফার্স্ট ইয়ার থেকেই।আমাদের হলের দুটি অংশ দুই জায়গায় থাকায় একসাথে কাজ চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন হতো।
তখন দেখতাম,কয়েকজন বড় ভাই আমাদের অংশে আলাদা ইউনিট করতে চাইতেন।কিন্তু সংগঠণের ঐ অংশের বড়রা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ও কাজের পরীক্ষা দিয়ে এই অংশকে আলাদা হতে দেননি।
যারা এই অংশকে আলাদা করে কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন,তারা পরবর্তীতে সংগঠণ থেকে বের হয়ে চলে এসেছিলেন।আর যারা বাঁধন থেকে বের হয়ে চলে এসেছিলো,তাদেরকে ক্ষমতালোভী বলে প্রচার করা হয়েছিলো।
পরবর্তীতে আমি যখন হলের জিএস হই,তখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো,হলের দুই অংশ থেকেই কমিটিতে পোস্ট দেওয়া হবে।
কিছুদিন দায়িত্ব পালন করার পরে আমি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করি।এর পর বছর দেড়েক এই অংশে কাজ স্হগিত হয়ে যায়।
কিছুদিন পূর্বে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,এই অংশকে আলাদা করে দেওয়া হবে।সংগঠণের ক্যাম্পাস সভাপতি ও সেক্রেটারী এসে বলছে,কয়েকজন জনশক্তি তৈরী করে দেওয়ার জন্য।
শুধু ওদেরকে বললাম-যে সিদ্ধান্তটি তিন বছর পূর্বে নেওয়া হলে এই অংশটি অনেক শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে কাজ করতো,এখন জনশক্তিহীন হলকে ইউনিট করাটা অনেক কঠিন।
কয়েকদিন পূর্বে কয়েক বছর পর ‘বাঁধন’ এর একটি মিটিং হয়।এবং সেখানে নতুন কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩.
প্রায় মাস ছয়েক পূর্বে একদিন দুপুরে খেতে খেতে এক বড় ভাইয়ের সাথে উনার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলছিলাম।কথায় কথায় বলেছিলাম-আপনি বর্তমানে যে ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটছেন,সেদিকে না ছুটে আপনি যদি অমুকদিকে ছুটতেন,তাহলে আপনি অনেক ভালো করতেন।আর আপনিও সেটার জন্য পুরোপুরি যোগ্য ছিলেন।
উনি শুধু আস্তে করে বললেন-দেখি,সর্বশেষ ফলাফল কি হয়?
দিন কয়েক পূর্বে উনার রুমে গিয়েছিলাম।অনেক্ষণ কথা বলেছিলাম।কথায় কথায় বললেন-আমি এখন যে চেষ্টা করছি,সেটি না করে যদি অমুক লাইনে (অনেকদিন পূর্বে যেটি বলেছিলাম) চেষ্টা করতাম,তাহলে এতদিনে অনেক ভালো কিছু করতে পারতাম।
হাসতে হাসতে উনাকে বললাম-আপনাকে এটা অনেকদিন পূর্বেই বলেছিলাম,কিন্তু আপনি তখন এটাকে কোন পাত্তাই দেননি।
উনি একটু চুপ থেকে বললেন-তখন এই বিষয়ে কোন চিন্তাই করিনি।
আমি আবার বললাম-তখন ঐটা করতে পারলে অনেক ভালো করতেন।আমাদের সমস্যা এটাই,আমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশী ভুল করি।
৪.
আপু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স,মাস্টার্স করেছেন।তৎকালীন সময়ে উনার আকাংখা ছিলো,উনি ব্যাংকার হবেন।
কিন্তু বিয়ের পরে সংসার নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে,অন্য কোনদিকে মনযোগ দিতে পারেননি।
গত বছর যখন সিদ্ধান্ত নিলেন,উনি কোন জবে ঢুকবেন,তখন উনি চাকরীর বয়সসীমার শেষপ্রান্তে।৬-৭ বছর পূর্বের সমস্ত পড়াশুনা ভুলে গেছেন।তারপরও শেষ চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু নতুন করে আর প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারেননি।
এখন মনে মনে বলেন,আমি যদি তখনই চেষ্টা করতাম,তাহলে কত সহজে এই প্রতিযোগিতায় টিকে যেতাম।
জীবনে অনেককে পরাজিত হতে দেখেছি,সময়ের কাজ সময়ে না করার জন্য।অথচ ঐ কাজের জন্য উনার যোগ্যতা,দক্ষতা ও সামর্থ্য কোনটিরই অভাব ছিলোনা।কিন্তু দূরদর্শিতার অভাবই উনাদের হারিয়ে দেয়।
Visits: 0